গাজীপুরে পৃথক দুর্ঘটনায় দুইজন, গণপিটুনিতে এক ডাকাত নিহত

আপডেট: July 16, 2022 |

মাছুদ পারভেজ, গাজীপুর প্রতিনিধি:  গাজীপুরে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় দুইজনসহ পোশাক শ্রমিককে অপরহরণের পর মুক্তিপণ আদায়ের আভিযোগে গণধোলাইয়ে এক ডাকাত নিহত হয়েছে।

শনিবার (১৬জুলাই) ভোররাত চারটায় মহানগরের পুবাইল থানার বসুগাঁও এলাকায় ট্রাক-লেগুনা, সকাল সাড়ে ৮টার গাজীপুরের পুবাইল থানাধীন সুকুন্দী ব্রিজ এলাকায় অটোরিক্সা মুখোমুখি সংঘর্ষে একজন ও শুক্রবার (১৫ জুলাই) দিবাগত রাত সাড়ে ১২টায় জয়দেবপুর থানার রক্ষিতপাড়ায় পোশাক শ্রমিককে অপরহরণের পর মুক্তিপণ আদায়ের অভিযোগে স্থানীয় জনতার গণধোলাইয়ে এক ডাকাত নিহত হয়েছে।

পুবাইল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোঃ আবুল কাশেম জানান, গাজীপুরের পুবাইল থানাধীন বসুগাঁও এলাকায় শনিবার ভোর রাতে চারটার দিকে টঙ্গীগামী একটি ট্রাকের সাথে বিপরীত দিকে থেকে আসার নরসিংদীর পাঁচদোনাগামী যাত্রীবাহী লেগুনার মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। লেগুনাটিতে থাকা ১২জন যাত্রীই কমবেশি আহত হয়েছে। এদের মধ্যে মনিরুজ্জামান (৩৮) নামে একজন যাত্রী গুরুতর আহত হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যায়। গুরুতর আহত এক যাত্রীকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়েছে। বাকীরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাড়িতে চলে গিয়েছে। এঘটনায় অভিযুক্ত ট্রাক ও চালককে শনাক্ত করতে কাজ করা হচ্ছে।

অপরদিকে, শনিবার (১৬জুলাই) সকাল সাড়ে আটটার দিকে গাজীপুর মহানগরের পুবাইল থানার সুকুন্দীবাগ ব্রিজের পাশে দুই অটোরিক্সার মুখোমুুখি সংঘর্ষে ইব্রাহিম হোসেন (৩৪) নামের একজন ব্যক্তি নিহত হয়েছে।

নিহত ইব্রাহিম হোসেন (৩৪) নরসিংদী জেলার মনোহরদী থানার কেরানীনগর গ্রামের মৃত ইদ্রিস আলীর ছেলে।

পুবাইল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) জাহাঙ্গীর মাহমুদ জানান, শনিবার সকাল সাড়ে আটটার দিকে ইব্রাহিম অটোরিক্সা দিয়ে জয়দেবপুর থেকে টঙ্গী যাচ্ছিলেন। ইব্রাহিমকে বহনকারী অটোরিক্সাটি সুকুন্দীবাগ ব্রিজ এলাকায় এসে পৌঁছলে বিপরীত দিক থেকে আসা অপর একটি অটোরিক্সার সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষ হলে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতলে পাঠায়। অটোরিক্সাসহ চালক দুজন আহত হয়, তাদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। এবিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এদিকে, গাজীপুরের রাজেন্দ্রপুরে পোশাক শ্রমিককে অপরহরণের পর মুক্তিপণ আদায়ের অভিযোগে স্থানীয় উত্তেজিত জনতার গণধোলইয়ে এক ডাকাত নিহত হয়েছে।

শুক্রবার (১৫ জুলাই) দিবাগত রাত সাড়ে ১২টায় জয়দেবপুর থানার রক্ষিতপাড়া (রতন মুন্সীর বসত বাড়ির) পূর্ব পাশের জঙ্গলে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় পোশাক শ্রমিক নারী হাসি আক্তার (১৯) বাদী হয়ে নিহত রাকিবসহ তিন জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ৫/৬ জনকে অভিযুক্ত করে মামলা দায়ের করেছেন।

নিহত রাকিব (২৭) জয়দেবপুর থানার রুন্দ্রপুর গ্রামের আলমগীর হোসেনের ছেলে। তার নামে জয়দেবপুর ও শ্রীপুর থানায় দস্যুতাসহ চারটি ডাকাতির মামলা রয়েছে।

জয়দেবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহাতাব উদ্দিন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

পোশাক শ্রমিক হাসি আক্তার জানান, শুক্রবার সন্ধ্যায় সে তার ভাড়া বাসা থেকে রাত সাড়ে ৮টায় সহকর্মী পোশাক শ্রমিক ইলিয়াছ উদ্দিনকে সাথে নিয়ে রাজেন্দ্রপুর হালডোবা এলাকায় অপর সহকর্মীর বাসায় বেড়াতে যাচ্ছিল। এসময় একদল ডাকাত তাদের পথরোধ করে। পরে ওই ডাকাতেরা সহকর্মী ইলিয়াছ উদ্দিনকে মারপিট করে নারীর মুখে রুমাল চেপে ধরে স্থানীয় রক্ষিতপাড়া (রতন মুন্সীর বসত বাড়ির) পূর্ব পাশের জঙ্গলে নিয়ে যায়। সেখানে ডাকাতেরা হত্যার হুমকি দিয়ে জঙ্গলের ভিতর একটি গাছের সাথে তার দুই হাত পেছনে নিয়ে রুমাল দিয়ে বাঁধে এবং আমার মুখ অপর একটি রুমাল দিয়ে বেঁধে মুক্তিপণ আদায়ের চেষ্টা করে।

এসময় তার সাথে থাকা সহকর্মী পোশাক শ্রমিক ইলিয়াছ উদ্দিন স্থানীয় লোকদের ঘটনা জানালে স্থানীয় শতাধিক জনতাকে নিয়ে ওই জঙ্গলের চারপাশ ঘেরাও করে। পরে তারা প্রধান আসামী রাকিবকে আটক করতে পারলেও তার সহযোগী অন্যান্যরা পালিয়ে যায়। উত্তেজিত জনতা রাকিবকে গণধোলাই দিয়ে দুই চোখ উপড়ে ফেলে এবং তার দুই পা ভেঙ্গে ফেলে। খবর পেয়ে জয়দেবপুর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে নারীকে উদ্ধার করে এবং ঘটনাস্থল থেকে একটি ধারালো দা উদ্ধার করে। গুরুতর আহত ডাকাত সদস্য রাকিবকে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে।

জয়দেবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহাতাব উদ্দিন জানান, স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে উত্তেজিত জনতার গণধোলইয়ের শিকার ডাকাতকে উদ্ধার করে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডাকাত রাকিবকে মৃত ঘোষণা করে। এ ঘটনায় ওই নারী বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছে। অভিযুক্ত অন্যান্য আসামীদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত আছে বলে তিনি জানান।

Share Now

এই বিভাগের আরও খবর