ইবিতে ছাত্রী হেনস্তার ঘটনায় দু’পক্ষের পাল্টা অভিযোগ
মোস্তাক মোর্শেদ ইমন, ইবি প্রতিনিধি: ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) বেগম খালেদা জিয়া হলের সিনিয়র ও জুনিয়র ছাত্রীকে হেনস্তার অভিযোগে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ জানিয়েছে জুনিয়র শিক্ষার্থী সায়মা ও সিনিয়র শিক্ষার্থী পপি।
শুক্রবার (২১ অক্টোবর) সকালে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের সৈয়দা সায়মা রহমান তার স্বাক্ষরিত আবেদনে র্যাগিং এর বিচার চেয়ে পপি ও তার সহপাঠীদের বিরুদ্ধে প্রক্টরের কাছে এ অভিযোগ করে।
অভিযোগ পত্রে সায়মা জানায়, ‘গতকাল ২০/১০/২০২২ ইং আনুমানিক সকাল ৯.১৫ ঘটিকার সময় মিতুর নির্দেশে পপি আমাকে ২০৪ নং রুমে ডেকে নিয়ে রুমের দরজা বন্ধ করে দেয়। এই সময়ে রুমের ভিতরে অবস্থানরত ছিল পপি, সালমা, ইরানী, প্রমি রিপা, তৃষা, মিতু, সান্তনা, রিমা, মনিরা, তন্দ্রা, মুম্মা,শুভ্রা। এরপর তারা কয়েকজন মিলে জিজ্ঞেস করে আমাকে হলে কে উঠাইছে, কে সিট দিয়েছে? আমি যখন হল প্রভোষ্ট ম্যামের কথা বলি তখন তারা আমাকে বলে যে এখানে সিট দিই আমরা, সিট কি ম্যাম দেয়? ম্যাম কি জানে কোন রুমে কোন সিট ফাঁকা আছে? সিটের বিষয় আমরাই যা করি তাই হয়।
পরে আমি ম্যামের সাথে কথা বলে জানাতে চাইলে তারা আমার উপর তেড়ে এসে আমাকে শারিরীক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করতে থাকে। এক পর্যায়ে তারা ৪/৫ জন মিলে আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে আমাকে মারধর করতে থাকে।
আমি রুম থেকে বের হতে চাইলে রুমে আমার হাত টেনে ধরে আবার শারিরীকভাবে হেনস্থা করতে থাকলে আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। পরে জ্ঞান ফিরে আসলে দেখি আমি মেডিকেলে চিকিৎসারত অবস্থায় আছি।
অভিযোগ পত্রে আরো বলা হয়, মেডিকেল থেকে ফিরলে সিনিয়ররা আমাকে সিট ছেড়ে দিতে বলেন। পরবর্তীতে সন্ধ্যায় আবারও আমাকে রুমে ডেকে নিয়ে মানসিকভাবে হেনস্তা করে। একপর্যায়ে আমাকে তারা অফিসরুমে তিন ঘণ্টা যাবৎ তালাবদ্ধ করে রাখে।।
এর আগে সায়মার বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূলফটকে সিনিয়র বয়ফ্রেন্ড হাফিজ দ্বারা পপি ও তার বন্ধুদের মারধর ও হেনস্তার অভিযোগ উঠে। এরই প্রেক্ষিতে গতকাল রাতে উত্তাল ছিলো বেগম খালেদা জিয়া হল।
হাফিজ ও সায়মাকে বহিষ্কারের দাবিতে আন্দোলন করে প্রায় দেড় শতাধিক শিক্ষার্থীরা। পরবর্তীতে শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নেয়ার আশ্বাসে তারা রাত ১১ টায় আন্দোলন স্থগিত করে।
অভিযোগ দায়েরকারী শিক্ষার্থী বাংলা বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের পপি খাতুন জানায়, আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। আজকে জনসম্মুখে আমার গায়ে হাত তুলেছে। এই লজ্জাজনক ঘটনার বিচার চাই।
জুনিয়রের বয়ফ্রেন্ড আমাকে মারধর করেছে। প্রশাসন সেই ছেলের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত না করলে আন্দোলন থামবে না। আর এইসব ঘটনার মূলে থাকা জুনিয়রকে এই মূহুর্তে হল থেকে বহিষ্কার করার পাশাপাশি আমাদের সকল দাবি মানতে হবে। আমি নিরাপত্তা চাই। বিচার চাই।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত মেহেদী হাসান হাফিজ জানায়, আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। পপির সাথে আমার কোনো ঝামেলা হয়নি। বহিরাগত এক ছেলের সাথে আমার কথা-কাটাকাটি হয়। তখন ঐ ছেলের সাথে পপি উপস্থিত ছিল।
এ বিষয়ে বেগম খালেদা জিয়া হলের প্রভোস্ট ড. ইয়াসমিন আরা সাথি বলেন, আমরা তাদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ইতিমধ্যে পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করে দিয়েছি এবং আমি প্রক্টর কেও বলেছি যাতে প্রশাসন থেকেও তদন্ত করে দেখা হয়। আপাতত সায়মাকে তার বাবা-মার সাথে থাকতে বলা হয়েছে।
তবে এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর হোসেনের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন ধরেননি।