বিদ্রোহী সংগঠনগুলোর সঙ্গে আলোচনার টেবিলে মিয়ানমারের জান্তাগোষ্ঠী

আপডেট: January 7, 2023 |

নির্বাচন আয়োজনের জন্য বিদ্রোহী সংগঠনগুলোর সঙ্গে আলোচনা এগিয়ে নিচ্ছে মিয়ানমারের জান্তা কর্তৃপক্ষ। গত শুক্রবার দেশটির রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণে থাকা বেশ কয়েকটি রাজ্যের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনার খবর দেওয়া হয়েছে। তবে এ পর্যন্ত সশস্ত্র যুদ্ধে অংশ না নেওয়া জাতিগত গোষ্ঠীগুলোকেই কেবল আলোচনায় ডেকেছে জান্তা।
শান স্টেট প্রগ্রেস পার্টি (এসএসপিপি), ইউনাইটেড ওয়া স্টেট পার্টি (ইউডাব্লিউএসপি), ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স আর্মি নামের তিনটি সংগঠনের সঙ্গে নির্বাচন আয়োজন নিয়ে আলোচনা করেছে মিয়ানমারের জান্তা প্রশাসন। তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হচ্ছে—এই তিনটি সংগঠনের কেউই জান্তার বিরুদ্ধে বর্তমানের সশস্ত্র যুদ্ধে লিপ্ত নেই।
২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে সেনাবাহিনী অভ্যুত্থান করে সামরিক শাসন জারি করার পর থেকে মিয়ানমারের গণতন্ত্রপন্থী আন্দোলনকর্মীরা রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করতে থাকেন। বিভিন্ন রাজ্যভিত্তিক জাতিগত গোষ্ঠীর কয়েকটি সশস্ত্র সংগঠনও সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে একযোগে অস্ত্র হাতে নেয়। তবে শান ও কাচিনসহ কয়েকটি রাজ্যে সশস্ত্র গোষ্ঠীরা অনেক দিন ধরেই তৎপর।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, সামরিক অভ্যুত্থানের পর সংশ্লিষ্ট দেশের সামরিক শাসক সাধারণ নির্বাচন আয়োজনকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক দেখানোর কৌশল হিসেবে ব্যবহার করে থাকে। নির্বাচন প্রক্রিয়ায়ও সামরিক বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ বজায় থাকে।
মিয়ানমারের জান্তা গত দুই বছরে দেশে কোনো কার্যকর ভিন্নমত বা প্রতিপক্ষকে দাঁড়াতে দেয়নি। প্রধান রাজনৈতিক দল ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসির (এনএলডি) নেত্রী অং সান সু চিকে সামরিক জান্তার আদালত ৩৩ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে। প্রধান সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো এখনো জান্তার বিরুদ্ধে লড়াই করছে। এ অবস্থায়ই জান্তা প্রশাসন অনুগত সংগঠনগুলোকে নিয়ে নির্বাচন আয়োজন করতে চাচ্ছে।
এর আগে গত মাসে আরো পাঁচটি ছোট জাতিগত বিদ্রোহী সংগঠনের সঙ্গে নির্বাচন আয়োজন নিয়ে বৈঠক করে জান্তা। সংগঠনগুলো বৈঠকের পর নির্বাচন আয়োজনের বিষয়ে তাদের সম্মতির কথা জানায়।
গত বুধবার মিয়ানমারের স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যের সময় সামরিক বাহিনীর প্রধান জেনারেল মিন অং হ্লাইং নির্বাচনের ব্যাপারে দৃঢ় লক্ষ্যের কথা জানান। তবে ওই দিন এ নিয়ে বিস্তারিত কোনো পরিকল্পনা তিনি প্রকাশ করেননি।
জাতিগত সংগঠনগুলোর সঙ্গে বৈঠকের ব্যাপারে মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে শুক্রবার বলা হয়েছে, রাজধানী নেপিডোয় সংগঠনগুলোর সঙ্গে তিন দিন ধরে আলোচনা হয়েছে।
মিয়ানমারের একেবারে উত্তরপ্রান্তের শান রাজ্য নিয়ন্ত্রণকারী সংগঠন এসএসপিপির মুখপাত্র জানান, সামরিক বাহিনী ‘আমাদের এলাকায় অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন করতে চায়। আমাদের দিক থেকে এর বিরোধিতা করব না।’
সামরিক বাহিনী দেশের উত্তরাঞ্চলে চীন সীমান্তবর্তী স্বশাসিত ওয়া রাজ্যের বিদ্রোহী সংগঠন ইউডাব্লিউএসপির সঙ্গেও বৈঠক করেছে। সংগঠনটির মুখপাত্র জান্তার সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া জানাননি। প্রায় ২৫ হাজার যোদ্ধা নিয়ে গঠিত ইউডাব্লিউএসপি হচ্ছে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ অরাষ্ট্রীয় বাহিনী।
মিয়ানমারের জাতিগত গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে ২০টির মতো বিদ্রোহী সংগঠন সক্রিয় রয়েছে। এসব সংগঠন সামরিক শাসকের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের পাশাপাশি একে অন্যের বিরুদ্ধেও লড়াইয়ে লিপ্ত।
সূত্র : আলজাজিরা,

Share Now

এই বিভাগের আরও খবর