চাঁপাইনবাবগঞ্জে তামাকমুক্ত দেশ গড়ার শপথ নিলেন শত শত ইয়ুথ লিডার

চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ সরকারি মডেল হাই স্কুল অডিটোরিয়ামে বাংলাদেশ পার্লামেন্টারি ফোরাম ফর হেলথ এন্ড ওয়েলবিং (BPFHW) এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশন তামাক প্রতিরোধের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে ‘ইয়ুথ লিডার্স কনফারেন্স,’ চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২০২৩’ শীর্ষক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।

আজ সোমবার এ অনুষ্ঠানে জেলার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর শত শত ইয়ুথ লিডার তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার শপথ নেন। এসময় তামাক নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ গ্রহণের জন্য চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য ডা: সামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুল এমপি’র কাছে দাবি জানান।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ও বাংলাদেশ পার্লামেন্টারি ফোরাম ফর হেলথ এন্ড ওয়েলবিং-এর সদস্য ডা: সামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুল এমপি বলেন, “ধূমপান ও তামাক তরুণদের উপর বিভিন্নভাবে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে নতুন ধূমপায়ী যেন তৈরি না হয়, সে লক্ষ্য অর্জনে স্কুল ক্লাবের মাধ্যমে তরুণদেরকে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে তামাকমুক্ত করার যে ঘোষণা দিয়েছেন তা বাস্তবায়নে আমাদের কিশোর-কিশোরীদেরকে সাথে নিয়ে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে।”

অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে শিবগঞ্জের উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার জনাব মোঃ জয়নাল আবেদিন বলেন, “ধূমপান ও তামাক প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে আমাদের ক্ষতি করছে। জাতিকে এগিয়ে নেয়ার জন্য তরুণ শিক্ষার্থীদের অবশ্যই তামাক ও ধূমপান থেকে বিরত থাকতে হবে। বাংলাদেশ থেকে তামাক নির্মূলে তরুণ শিক্ষার্থীসহ সবাইকে নিজ নিজ এলাকার দোকানগুলোতে যেন তামাক কোম্পানিগুলো তরুণদের টার্গেট করে বিজ্ঞাপন-প্রচারণা চালাতে না পারে সেই বিষয়ে সজাগ থাকতে হবে।”

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশন-এর নির্বাহী পরিচালক এবং গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিন ইনিশিয়েটিভ (গ্যাভি) সিভিল সোসাইটি অর্গানাইজেশন (সিএসও) স্টিয়ারিং কমিটির ভাইস-চেয়ার ডাঃ নিজাম উদ্দীন আহম্মেদ বলেন, “তামাক কোম্পানিগুলো আকর্ষণীয় প্রচার-প্রচারণা, প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠান আয়োজন, এবং কমদামে বিড়ি/সিগারেট বিক্রির মাধ্যমে তরুণ ও যুবসমাজকে টার্গেট করছে। শুধু তাই নয় অন্যের ধূমপানের কারণে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হয় অগণিত নারী ও শিশু। তার চেয়ে ভয়ংকর তথ্য হচ্ছে এক গবেষণায় দেখা গেছে বাংলাদেশের প্রায় ৯৫ শতাংশ নেশাগ্রস্ত মানুষ প্রথমে বিড়ি/সিগারেট সেবন করে এবং পরবর্তীতে বিভিন্ন নেশাজাতীয় দ্রব্যে আসক্ত হয়। বাংলাদেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আশেপাশে যেসকল দোকানে তামাকপণ্য বিক্রি করা হয় তার মধ্যে প্রায় ৯০ শতাংশ দোকানে তামাক কোম্পানিগুলো আকর্ষনীয়ভাবে তামাকপণ্যের প্রচার-প্রচারণা করে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে তামাক নির্মূল করার ঘোষণা দিয়েছে। তাই শিক্ষার্থীদের ধূমপান ও তামাকমুক্ত পরিবেশে গড়ে তুলতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর আশে-পাশে তামাকপণ্য বিক্রি ও প্রচার-প্রচারণা নিষিদ্ধ করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে শতভাগ ধূমপানমুক্ত করতে হবে।”

অনুষ্ঠানের সঞ্চালনায় স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশন-এর পরিচালক অধ্যাপক ড. মোঃ রফিকুল ইসলাম বলেন, “কনফারেন্সের মূল উদ্দেশ্য ধূমপান ও তামাক প্রতিরোধের লক্ষ্যে তরুণদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গঠনে তাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা। এক গবেষণায় দেখা গেছে অপ্রাপ্তবয়স্কদের (১২ থেকে ১৪ বছর বয়সী) মধ্যে ৪৪ শতাংশ মানুষ তামাক কোম্পানিগুলোর বিজ্ঞাপনে আকৃষ্ট হয়ে ধূমপান ও তামাক গ্রহণে আগ্রহী হয়। এটি পরবর্তীতে অন্যান্য নেশায় আসক্ত করে।”
অনুষ্ঠানের মূল প্রতিপাদ্য উপস্থাপনে স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশন-এর প্রকল্প সমন্বয়ক ডাঃ ইফতেখার মুহসিন বলেন, “তামাক মানবদেহের জন্য একটি ভয়ংকর বিষ। বিশ্বজুড়ে তামাকজনিত রোগে বছরে প্রায় ৮০ লক্ষের বেশি মৃত্যু হয়, যার মধ্যে সরাসরি তামাক ব্যবহারের কারণে মারা যায় ৭১ লক্ষ মানুষ এবং পরোক্ষ ধূমপানের কারণে মারা যায় প্রায় ৯ লক্ষ মানুষ। এর মধ্যে শুধু বাংলাদেশেই মারা যায় প্রায় ১ লক্ষ ৬১ হাজার মানুষ। বাংলাদেশের অপ্রাপ্তবয়স্কদের (১৩-১৫ বছরের মধ্যে) মধ্যে প্রায় ৭ শতাংশ মানুষ কোন না কোন ধরনের তামাক ব্যবহার করে। প্রায় ৫৯ শতাংশ মানুষ পাবলিক প্লেসে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হয়। ফলে হৃদরোগ এবং ক্যান্সারসহ বিভিন্ন ধরনের অসংক্রামক রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। তাই সুস্বাস্থ্য অর্জনে, জনস্বাস্থ্য রক্ষার্থে এবং অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধে কিশোর-কিশোরীদের অবশ্যই পরিবার-পরিজন ও বন্ধুবান্ধবের কাছে তামাকের ক্ষতিকর দিকগুলো তুলে ধরে তামাক ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করতে হবে।”
ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন সংশোধন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে সকল স্তরের মানুষ এবং গণমাধ্যম প্রতিনিধিবৃন্দের সচেতনতা বৃদ্ধি ও অংশগ্রহণের বিষয়টিও অনুষ্ঠানে তুলে ধরা হয়। শিবগঞ্জের উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার জনাব মোঃ জয়নাল আবেদিনের সভাপতিত্বে আয়োজিত অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন শিবগঞ্জ সরকারি মডেল হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক জনাব মোহাম্মদ সাইফুল মালেক সহ সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ও প্রতিনিধিবৃন্দ।