খালেদা জিয়া বিদেশ গেলে বিএনপির নেতৃত্বে কি সংকট দেখা দিতে পারে?

আপডেট: November 23, 2024 |
inbound4273383159798728326
print news

সশস্ত্র বাহিনী দিবসে সেনাকুঞ্জে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার উপস্থিতি রাজনীতিতে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে৷ খালেদা জিয়া বিএনপির রাজনীতিতে কতটা সক্রিয় থাকবেন- এই আলোচনাও যেমন আছে, তেমনি অন্তর্বর্তী সরকার বিএনপিকে ‘তুষ্ট’ রাখতে তৎপর কিনা তা নিয়েও আছে আলোচনা।

এক যুগ পর গত বৃহস্পতিবার সশস্ত্র বাহিনী দিবসের অনুষ্ঠানে সেনাকুঞ্জে যান খালেদা জিয়া৷ ওই অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে ছয় বছর পর তাকে কোনো অনুষ্ঠানে প্রথম প্রকাশ্যে দেখা গেল৷

২০১৮ সালে দুর্নীতির মামলায় কারাগারে পাঠানোর পর ২০২০ সালের মার্চে তিনি নির্বাহী আদেশে মুক্তি পান৷ কিন্তু ২০১৮ সালের পর বৃহস্পতিবারের আগ পর্যন্ত তাকে কোনো অনুষ্ঠানে দেখা যায়নি৷

খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা আগের চেয়ে ভালো জানিয়ে তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. এজডেএম জাহিদ হোসেন বলেন, ‘ডিসেম্বরেই তাকে চিকিৎসার জন্য লন্ডন পাঠানো হতে পারে।’

দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান অনেকদিন ধরেই দেশের বাইরে৷ তার মামলা প্রত্যাহারের প্রক্রিয়া শুরুর কোনো উদ্যোগ এখনো দেখা যায়নি৷ ফলে তিনি কখন দেশে ফিরতে পারবেন, নির্বাচনের আগে পারবেন কিনা তা এখনো নিশ্চিত নয়৷

তাই এখন খালেদা জিয়া দেশের বাইরে গেলে দেশে বিএনপির নেতৃত্বে কি কোনো সংকট দেখা দিতে পারে? রাজনীতিতে ফের ‘মাইনাস টু’ থিওরির যে কথা শোনা যাচ্ছে তাতে বিএনপি কি এখন চায় খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমান দুজনই দেশের বাইরে থাকুক? খালেদা জিয়া দেশের বাইরে গেলে তার ফেরা নিয়ে কোনো জটিলতা দেবে না তো?

রাজনৈতি বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. জাহেদ উর রহমান বলেন, ‘বিএনপি প্রকাশ্যে বলেছে তারা বিরাজনীতিকরণ বা ওয়ান ইলেভেনের সময় মাইনাস টু-নিয়ে তারা সাফার করেছে৷ তাই এখন তারা ঝুঁকি বোধ করে৷

আমি মনে করি, তারেক রহমানও বিদেশে আর উনিও (খালেদা জিয়া) যদি বিদেশে চলে যান, তাহলে তাদের আশঙ্কা মতো কোনো পরিকল্পনা থাকে সেটা বাস্তবায়ন সহজ হবে৷ তিনি যাচ্ছেন না ওই কারণে।’

সেনাকুঞ্জে খালেদা জিয়া বৃহস্পতিবার আকর্ষণের কেন্দ্র বিন্দুতে ছিলেন৷ প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও খালেদা জিয়া পাশাপাশি বসেন৷ তারা কথা বলেন৷ খালেদা জিয়া ছিলেন হাস্যোজ্জ্বল৷

ড. ইউনূস তার বক্তৃতায়ও খালেদা জিয়ার প্রশংসা করেন, তার রোগ মুক্তি কামনা করেন৷ জুলাই-আগস্ট ছাত্র জনতার আন্দোলনের শীর্ষ সমন্বয়করাও তার সঙ্গে সেখানে দেখা করেন৷

অধ্যাপক জাহেদ উর রহমান বলেন, ‘দেশের রাজনীতিতে খালেদা জিয়ার ইনভলবমেন্ট প্রায় অসম্ভব৷ তিনি এখন হুইল চেয়ার ছাড়া চলাফেরা করতে পারেন না৷ তার নানা ধরনের শারীরিক সংকট আছে৷

বিএনপির রাজনীতিতে খালেদা জিয়া আর ছেলে তারেক রহমানকে নিয়ে এক ধরনের ডিভিশনের কথা শোনা যায়৷ কিন্তু যে যেভাবেই বলুক না কেন, আমি মনে করি, বিএনপির ভবিষ্যৎ রাজনীতি তারেক রহমানকেই কেন্দ্র করে৷”

‘আর বেগম জিয়াকে সেনাকুঞ্জে যে সম্মান দেখানো হয়েছে, তা শুধু রাজনৈতিক মহলে না, দেশের সাধারণ মানুষের কাছেও প্রশংসিত হয়েছে৷

এটা অন্তর্বর্তী সরকারের একটা ইতিবাচক দিক৷ আন্দোলনের সমন্বয়করাও তার সঙ্গে সেখানে দেখা করেছেন, কথা বলেছেন৷ এটা আরও ইতিবাচক পরিবেশ তৈরি করবে।’-বলেন তিনি৷

এ বিষয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক হাফিজুর রহমান কার্জন বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে যে সম্মান দেয়া হয়েছে, সেটা তার প্রাপ্য৷ তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী৷ সাবেক রাষ্ট্রপতি ও মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার ও সাবেক সেনা প্রধান জিয়াউর রহমানের স্ত্রী৷

সুতরাং, এটা নিয়ে রাজনীতির কোনো ইতিবাচক দিক বোঝা যায় না৷ কারণ, তারেক রহমান তো বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকার অনেক কিছু চাপিয়ে দিতে চাচ্ছে৷

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, দ্রুততম সময়ের মধ্যে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করতে হবে৷ আমরা তো দেখছি, অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে বিএনপির টাগ অব ওয়ার শুরু হয়ে গেছে৷ তাদের অবস্থানের কারণেই তো রাষ্ট্রপতিকে সরানো গেল না৷”

‘আর এই প্রেক্ষাপটে খালেদা জিয়া দেশের বাইরে চিকিৎসার জন্য যাচ্ছেন না বলে আমি মনে করি৷ মাইনাস টু থেকে এখন তো মাইনাস ফোরের কথা শোনা যাচ্ছে৷ তারেক রহমান দেশের বাইরে আছেন৷

তার মামলা এখনো চলামান৷ তিনি কবে ফিরতে পারবেন তা অনিশ্চিত৷ তাই খালেদা জিয়া দেশের বাইরে যাওয়ার ঝুঁকি নিতে চাইছেন না বলে মনে করি৷ খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান তাদের যে-কোনো একজন দেশে থাকবেন।’ বলেন হাফিজুর রহমান।

বিএনপির অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতেও কিছুটা মেরুকরণের ইঙ্গিত দিয়ে তিনি বলেন, ‘সেনাকুঞ্জে খালেদা জিয়ার উপস্থিতি নিঃসন্দেহে বিএনপির নেতা-কর্মীদের উজ্জ্বীবিত করছে৷ আর বিএনপিতে খালেদা জিয়ার গ্রহণযোগ্যতা অনেক বেশি৷ অনেক বেশি ইতিবাচক৷”

অধ্যাপক ড. আমেনা মোহসীন মনে করেন, ‘বিএনপি এখন সব দলের অংশগ্রহণে একটা নির্বাচন চায়৷ আমার মনে হয়, খালেদা জিয়া শারীরিকভাবে উপযুক্ত হলে দেশের বাইরে যাবেন৷

তার আগ পর্যন্ত তিনি তো দেশেই আছেন৷ তারেক রহমান তো দেশের বাইরে আছে৷ তবে আমরা মনে হয়, এখন যা পরিস্থিতি তাতে মাইনাস টু থিওরি বাস্তবায়নের মতো অবস্থা আছে৷ দেশে বলেন আর বিদেশে বলেন সবাই তো নির্বাচন ও সংস্কারের কথা বলছে৷ টু মাইনাস তো কেনো গণদাবি না৷”

খালেদা জিয়ার চিকিৎসক দলের অন্যতম সদস্য ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, ‘আপনারা তো সেনাকুঞ্জে খালেদা জিয়াকে দেখেছেন৷ তিনি আগের চেয়ে অনেক ভালো আছেন৷ আশা করি, ডিসেম্বরের প্রথম বা দ্বিতীয় সপ্তাহে চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে যাবেন তিনি৷”

জাহিদ হোসেন আরও বলেন, ‘ম্যাডাম খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেয়ার সব প্রস্তুতি আছে৷ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সও ঠিক করা হয়েছে৷ তার সঙ্গে চিকিৎসকসহ যারা যাবেন, তা-ও ঠিক করা আছে৷

তার চিকিৎসার জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ডও মনে করে তিনি এখন ফ্লাই করার উপযুক্ত৷ তিনি প্রথমে লন্ডন যাবেন৷ যুক্তরাষ্ট্রেও তার জন্য যোগাযোগ করা হয়েছে৷”

আর বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, ‘তারেক রহমানের মামলার সঙ্গে দেশে আসার কোনো সম্পর্ক নেই৷

তিনি আগেও বলেছেন তার মামলা আইনি প্রক্রিয়ায় মোকাবেলা করবেন৷ তিনি দেশের মানুষের প্রত্যাশা অনুযায়ী দেশে ফেরার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন৷”

মাইনাস টু নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে কায়সার কামাল বলেন, ‘এটা নিয়ে বিএনপি কোনো চাপে বা সংকটে নেই৷ দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নির্দেশে, তারেক রহমানের নেতৃত্বে এবং স্থায়ী কমিটির সিদ্ধান্তে দলের সব কাজ পরিচালিত হচ্ছে৷ এর সঙ্গে কাজ করছে কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি৷”

সূত্র: ডয়েচে ভেলে।

Share Now

এই বিভাগের আরও খবর