আজারবাইজানকে পরমাণু হুমকি আর্মেনিয়ার

সময়: 10:39 am - October 3, 2020 | | পঠিত হয়েছে: 3 বার

বিতর্কিত নাগোরনো-কারাবাখ অঞ্চলের দখলদারি নিয়ে আজারবাইজান এবং আর্মেনিয়ার সীমান্ত সংঘর্ষ ক্রমশ মোড় নিচ্ছে পুরোদস্তুর যুদ্ধের দিকে। প্রয়োজনে পরমাণু অস্ত্র প্রয়োগেরও হুমকি দিয়েছে আর্মেনিয়া।

মুসলিম রাষ্ট্র আজারবাইজানের হয়ে লড়তে ককেশাস পর্বতে পাক সেনাও হাজির হয়েছে।

রবিবার রাতে আজারবাইজান সেনা নাগোরনো-কারাবাখ সংলগ্ন আর্মেনিয়া-নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলের দখল নিতে অভিযান চালায়। তাদের প্রতিরোধ করে সেখানকার সংখ্যাগরিষ্ঠ আর্মেনীয় বাসিন্দাদের মিলিশিয়া বাহিনী ‘আর্টসাক ডিফেন্স আর্মি’। এরপর সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে আর্মেনিয়া সেনাবাহিনীও।

গত ছ’দিনের লড়াইয়ে দু’পক্ষের বেশ কিছু ট্যাঙ্ক, হেলিকপ্টার ও ড্রোন ধ্বংস হয়েছে। দু’পক্ষের কয়েকশো সেনার পাশাপাশি বহু অসামরিক নাগরিক হতাহত হয়েছেন। আর্মেনিয়া হুমকি দিয়েছে, প্রয়োজনে পরমাণু অস্ত্রবাহী দূরপাল্লার রুশ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করা হবে।

সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের দুই প্রজাতন্ত্রের লড়াইয়ে ইতিমধ্যেই জড়িয়ে পড়েছে বিশ্বের বেশ কিছু দেশ। মুসলিম রাষ্ট্র আজারবাইজানকে প্রকাশ্যে সমর্থন জানিয়েছে তুরস্ক।

অন্যদিকে, খ্রিস্টান সংখ্যাগরিষ্ঠ আর্মেনিয়ার প্রতি ঝুঁকে রয়েছে আমেরিকা, ফ্রান্সসহ পশ্চিমী দুনিয়া এবং রাশিয়া। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান এদিন আর্মেনিয়া-আজারবাইজান দ্বন্দ্বে সামরিক হস্তক্ষেপ না করার বার্তা দিয়েছেন ন্যাটো ও রাশিয়াকে।

তুরস্কের পার্লামেন্টে এক বক্তৃতায় তিনি বলেছেন, অবিলম্বে সংঘর্ষ বিরতি কার্যকর করে নাগোরনো-কারাবাখ-সহ অধিকৃত এলাকাগুলো থেকে আর্মেনীয় সেনাকে সরতে হবে।

৪,৪০০ বর্গকিলোমিটারের নাগোরনো-কারাবাখের অধিকারনিয়ে আর্মেনিয়া-আজাবাইজান মতবিরোধের সূচনা ১৯৮৮ সালে। ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর সদ্য স্বাধীন দুই দেশের মতবিরোধ গড়ায় সামরিক সংঘাতে। সোভিয়েত জমানায় আজারবাইজানের অন্তর্ভুক্ত এই অঞ্চলের প্রায় দেড় লাখ বাসিন্দার অধিকাংশই আর্মেনীয় খ্রিস্টান। ১৯৯৪ সালের সীমান্ত সংঘর্ষের পর থেকে নাগোরনো-কারাবাখ এবং আশপাশের বেশ কিছু অঞ্চল প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে আর্মেনিয়ার নিয়ন্ত্রণে। ২০১৬ সালেও ওই এলাকার দখল নিতে অভিযান চালিয়ে ব্যর্থ হয়েছিল আজারবাইজান ফৌজ।

আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহ্যাম আলিয়েভ সেপ্টেম্বরের গোড়ায় ওই এলাকা দখলমুক্ত করার ডাক দিয়েছিলেন। ২৭ সেপ্টেম্বর রাতে নাগোরনো-কারাবাখের রাজধানী স্টেপনাকার্টসহ কয়েকটি শহরকে নিশানা করে অভিযান চালায় আজারবাইজানের স্থল ও বিমানবাহিনী। এরপর থেকেই লড়াই ক্রমশ তীব্র হতে শুরু করেছে।

আর্মেনিয়ার মদতে পুষ্ট ‘আর্টসাক ডিফেন্স আর্মি’ স্বীকার করেছে, নাগোরনো-কারাবাখের কিছু অংশ দখল করেছে আজারবাইজান সেনাবাহিনী। এক টেলিফোন কথোপকথনের সূত্র ধরে আর্মেনিয়ার সংবাদমাধ্যমের অভিযোগ, আজারবাইজানের হয়ে লড়াইয়ে অংশ নিচ্ছে পাকিস্তান সেনা। অডিও ক্লিপিংসে আজারবাইজানের দুই ব্যক্তিকে পাক সেনার উপস্থিতি নিয়ে কথা বলতে শোনা যাচ্ছে।

প্রসঙ্গত, সত্তরের দশকে পশ্চিম এশিয়ায় যুদ্ধের সময় আরব জোটের পক্ষে প্রত্যক্ষভাবে ইজরায়েল বিরোধী যুদ্ধে অংশ নিয়েছিল পাকিস্তান সেনাবাহিনী ফৌজ।

আর্মেনিয়া সেনার অভিযোগ, আজারবাইজানের পক্ষে তুরস্ক তাদের এফ-১৬ যুদ্ধবিমান পাঠিয়েছে। আর্মেনিয়ার অভিযোগ, তুরস্কের এফ-১৬ বিমান হামলায় তাদের বায়ুসেনার একটি যুদ্ধবিমান ধ্বংস হয়েছে। আজারবাইজান সিরিয়া থেকেও ভাড়াটে সেনা এনেছে বলেও অভিযোগ। অন্যদিকে, আর্মেনিয়ার সমর্থনে রুশ সেনার আগমনের খবর মিলেছে। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাক্ররঁ অবিলম্বে সংঘর্ষ বিরতির বার্তা দিয়েছেন দু’দেশকে।

এদিন পুতিন রুশ সেনা কর্মকর্তা ও নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে নাগোরনো-কারাবাখ পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেছেন। জুতসংঘের মহাসচিব আন্তোনিয়ো গুতেরেসও চলতি সপ্তাহে সংঘর্ষ বিরতির আবেদন জানিয়েছেন আর্মেনিয়া ও আজারবাইজানের কাছে।

বৈশাখী নিউজএপি

Share Now

এই বিভাগের আরও খবর