বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে বাণিজ্য সংস্থাগুলোকে সংগঠিত করছে বিএপিএলসি

আপডেট: October 8, 2020 |

বাংলাদেশে বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে বাণিজ্য সংস্থাগুলোকে সংগঠিত করছে বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব পাবলিকলি লিস্টেড কোম্পানিজ (বিএপিএলসি) বলেছেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান এমপি ।

বুধবার বিকালে অনলাইনে অনুষ্ঠিত এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

বাংলাদেশের ব্যবসা ও বিনিয়োগ খাতসহ সার্বিক অর্থনৈতিক কার্যক্রমে মহামারির প্রভাব সম্পর্কে আলোচনা করার লক্ষ্যে বিএপিএলসি এই সেমিনারের আয়োজন করে। ‘কোভিড-১৯ প্যানডেমিক: ইমপ্যাক্ট অন ইনভেস্টমেন্ট ইন বাংলাদেশ অ্যান্ড দ্য ওয়ে ফরওয়ার্ড’ শীর্ষক ভার্চুয়াল সেমিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ’র (বিডা) সভাপতি মো. সিরাজুল ইসলাম, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) অধ্যাপক শিবলী রৌবায়েত-উল- ইসলাম। এছাড়া আলোচক হিসেবে মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি’র (এমসিসিআই) সভাপতি নিহাদ কবির বক্তব্য রাখেন।

বিএপিএলসির সভাপতি মো. আজম জে চৌধুরীর সভাপতিত্বে এবং বিএপিএলসির সহ-সভাপতি মো. রিয়াদ মাহমুদের সঞ্চালনায় ওয়েবিনারে মূল বক্তব্য রাখেন ইস্ট কোস্ট গ্রুপের পরিচালক মো. তানজিম চৌধুরী।
দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অসাধারণ ভূমিকা রাখার জন্য বাণিজ্য সংস্থাগুলোর নেতৃত্বকে অভিনন্দন জানিয়ে সালমান এফ রহমান বলেন, ‘প্রতিষ্ঠার পর থেকেই বাণিজ্য সংস্থাগুলো দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে আসছে।’

তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্ব একটি নতুন বিশ্বাসের জন্ম দিয়েছে এবং স্টেকহোল্ডারদের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দিয়েছে। ফলস্বরূপ মহামারির মধ্যেও দেশের ব্যবসায়িক কার্যক্রমসহ অনান্য সব জরুরি কাজ সফল ও সুষ্ঠুভাবে চালু রাখা সম্ভব হয়েছে। এ দেশের মানুষ সবসময় যেকোনও দুর্যোগ মোকাবিলা করার সক্ষমতা রাখে। যার ফলে মহামারির মাঝে ঘূর্ণিঝড় ও বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গেও আমরা লড়াই করতে সক্ষম হয়েছি।’

সালমান এফ রহমান আরো বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর দৃঢ় মনোভাবের কারণেই সমাজের উঁচু স্তরের মানুষের মানসিকতায় অনেকটা পরিবর্তন এসেছে। সেমিনারে উপস্থিত সব বাণিজ্য সংস্থার করপোরেট গভর্ন্যান্সে সহায়তা করা উচিত।

ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে কর ভিত্তির প্রসারণ এই প্রক্রিয়াকে সহযোগিতা করতে পারে। আমাদের এটাও মনে রাখতে হবে যে, অনুন্নত দেশ থেকে সরে আসার কারণে কিছু সুবিধা হারালেও, একটি উন্নত দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হলে আমাদের জন্য আরো অনেক সম্ভাবনার দ্বার খুলে যাবে এবং বাণিজ্য সংস্থাগুলোর কাজ হবে সেই সম্ভাবনার দ্বার চিহ্নিত করে সেগুলোকে কাজে লাগানো।’ তিনি একটি বিশ্ববিদ্যালয় চালু করার ক্ষেত্রে বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে এফবিসিসিআই-এর সহযোগিতা, অভ্যন্তরীণ শিল্পকে রক্ষা করতে মূসক ও কর ব্যবস্থা পুনর্গঠন এবং দ্বিপাক্ষিক বাজারে বিনামূল্যে প্রবেশাধিকারের জন্য অন্যান্য দেশের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তিতে (এফটিএ) সম্পৃক্ত হওয়ার বিষয়টিও তুলে ধরেন।

বিএপিএলসি’র এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, ‘এফবিসিসিআই হেল্প ডেস্ক এবং হেল্পলাইনগুলো নির্দিষ্ট কিছু চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেছে এবং আমরা স্ব স্ব মন্ত্রণালয়কে সহায়তা প্রদান করে আসছি। যেমন- চা শিল্পের জন্য মাত্রাতিরিক্ত করে যন্ত্রপাতি কেনা হওয়ার বিষয়টি আমরা চিহ্নিত করেছি। এরকম আরো একটি উদাহরণ হলো সেচ ও উৎপাদন শিল্পের যন্ত্রপাতিতে করারোপের বিষয়টি চিহ্নিতকরণ। গুরুত্বপূর্ণ কোনও ইস্যু কিংবা নিয়ন্ত্রণ সুপারিশ প্রণয়ণের ক্ষেত্রে যেকোনও সমস্যা সমাধানে বিএপিএলসি’কে সহযোগিতা করতে পারলে তা এফবিসিসিআই-এর জন্য আনন্দের হবে।’

তিনি বলেন, ‘দেশে এমএসএমইএস খাত থেকে শুরু করে বৃহত্তম সেক্টরে বাংলাদেশের বাণিজ্য সংস্থাগুলোর প্রতিনিধি হিসেবে আমরা কমনওয়েলথ এন্টারপ্রাইজ অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট কাউন্সিল (সিডব্লিউইআইসি), চায়না কাউন্সিল ফর দ্য প্রমোশন অব ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড (সিসিপিআইটি), সিল্ক রোড চেম্বার অব ইন্টারন্যাশনাল কমার্স (এসআরসিআইসি), ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স (আইসিসি), কনফেডারেশন অব এশিয়া-প্যাসিফিক চেম্বারস অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি’র (সিএসিসিআই)সহ ১২৯টি স্ট্র্যাটেজিক গ্লোবাল পার্টনারের সঙ্গে যুক্ত হয়েছি।’
তিনি আরো বলেন, ‘অ-রাজস্ব নীতি সমর্থন, রাজস্ব নীতি সমর্থন, প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়ন এবং আমাদের অর্থনীতিকে সার্বিকভাবে পুনরুদ্ধারের জন্য নিরবচ্ছিন্ন কর্মসূচি হিসেবে টেকসই উন্নয়নের ক্ষেত্রে তিন বছরের রোডম্যাপ প্রণয়ন করেছি। এ ছাড়া আমরা আর্থিক এবং অ-আর্থিক উভয়, কর ও শুল্ক হস্তক্ষেপ এবং সরকারের পরিপূরক উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। তবে ব্যাংকিং ব্যবস্থায় সর্বাত্মক নীতি সমর্থন থাকা সত্ত্বেও সিএমএসএমই এবং কৃষির জন্য শিগগিরই আরো ভালো ফলাফল আশা করছি।’

তিনি এলডিসি থেকে উত্তরণ এবং এসডিজি ২০৩০ এর লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য বৈচিত্র্যময় বিভিন্ন যন্ত্রের যথাযথ ব্যবহার; প্রকল্পের সম্ভাব্যতার বিপরীতে উদ্যোক্তাদের ভূমি মালিক হিসেবে মূল্যায়ন করে অর্থায়নকারীর মানসিকতা বিডা’র সভাপতি সিরাজুল ইসলাম তার বক্তব্যে বলেন, “সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য ব্যবসায়িক কার্যক্রম সহজ করতে ব্যাপক সংস্কারের পাশাপাশি প্রণোদনাগুলোকে সমন্বিত করতে বিডা বেশ কিছু নীতিমালা পুনর্বিবেচনা করেছে। বিনিয়োগের সঙ্গে জড়িত গতিশীল সেবাগুলোকে এগিয়ে নিতে বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি ওয়ান স্টপ সার্ভিসও চালু করা হয়েছে। কিন্তু এলডিসি স্ট্যাটাস থেকে উত্তরণের সঙ্গে সঙ্গে মধ্যম আয়ের দেশগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতা করার জন্য আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে। সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে, তবে বেসরকারি বা সরকারিসহ যে কোনও সংস্থার সহযোগিতায় আমরা সব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সক্ষম হব।’

তিনি আরো বলেন, ‘অর্থনীতিতে বেসরকারি খাতের অবদান ৮০% থাকায় এই খাতের নীতিমালাগুলো তাদের অনুকূলেই থাকা উচিত। এমএসএমই-এর জন্য প্রণোদনা প্যাকেজের সহজ এবং কার্যকর বিতরণ নিশ্চিত করতে হবে। কারণ এই খাতই বেশিরভাগ মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে থাকে।’

বিএসইসির সভাপতি তার বক্তব্যে বিনিয়োগকারীদের নির্দেশিকা প্রদানের জন্য সুসংহত করপোরেট গভর্ন্যান্সের গুরুত্ব তুলে ধরেন এবং ওয়েবিনারের মূল বক্তা ইস্ট কোস্ট গ্রুপের পরিচালক তানজিম চৌধুরী অর্থনীতির পুনরুদ্ধারে বিনিয়োগের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করে অর্থনীতির বিভিন্ন ক্ষেত্রে মহামারির প্রভাবগুলো তুলে ধরেন।

 

বৈশাখী নিউজ/ফারজানা

Share Now

এই বিভাগের আরও খবর