কবি সুফিয়া কামালের জন্মদিন আজ

আপডেট: June 20, 2021 |

দেশের নারী জাগরণের অগ্রদূত কবি বেগম সুফিয়া কামালের ১১০তম জন্মবার্ষিকী আজ। প্রগতিশীল সমাজ বিনির্মাণের এ স্বপ্নদ্রষ্টা বরিশালের শায়েস্তাবাদের নবাব পরিবারে ১৯১১ সালের ২০ জুন জন্মগ্রহণ করেন।

আজীবন মুক্তবুদ্ধির চর্চার পাশাপাশি সাম্প্রদায়িকতা ও মৌলবাদের বিপক্ষে সংগ্রাম করেছেন তিনি। সাহিত্যচর্চার পাশাপাশি গণতান্ত্রিক আন্দোলন-সংগ্রামে বিশেষ ভূমিকা রেখেছেন।

কবি বেগম সুফিয়া কামালের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে পৃথক বাণী দিয়েছেন। বাণীতে তারা এ মহীয়সী নারীর জন্মবার্ষিকীতে তার স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা এবং আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন।

কবি সুফিয়া কামাল ছিলেন আবহমান বাঙালি নারীর প্রতিকৃতি। অন্যদিকে বাংলার প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামে ছিল তার আপসহীন এবং দৃপ্ত পদচারণা।

সব জননীই তার সন্তানের জন্য সাহসী হয়ে উঠতে পারে কিন্তু তিনি যে এ দেশের সব মানুষের এক শাশ্বত জননী! একজন জননী সাহসিকা যে তার সন্তানদের জন্য হায়েনার বিরুদ্ধেও লড়তে পারেন, তার মুখের ওপর কড়া প্রতিবাদ করতে পারেন। একবার বাঙালিকে হায়েো বা জানোয়ার বলেছিল স্বৈরশাসক আয়ুব খান।

কবি সুফিয়া কামাল জবাব দিয়েছিলেন ‘তবে আপনিও তো সেই জানোয়ারের প্রেসিডেন্ট।’ সেই বাঙালির অপমান তিনি কী করে মেনে নেন যে বাঙালির ভাষা বাংলায় লেখালেখির জন্য, বাংলায় কথা বলার জন্য, বাঙালিদের সঙ্গে মেলামেশার জন্য, তিনি তার পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছেন!

১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর সুফিয়া কামাল পরিবারসহ কলকাতা থেকে ঢাকায় চলে আসেন। ভাষা আন্দোলনে তিনি সক্রিয়ভাবে অংশ নেন এবং এই আন্দোলনে নারীদের উদ্বুদ্ধ করেন। ১৯৫৬ সালে শিশু সংগঠন কচিকাঁচার মেলা প্রতিষ্ঠা করেন তিনি।

পাকিস্তান সরকার ১৯৬১ সালে রবীন্দ্র সংগীত নিষিদ্ধ করলে তার প্রতিবাদে সংগঠিত আন্দোলনে তিনি জড়িত ছিলেন এবং তিনি ছায়ানটের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।

১৯৬৯ সালে মহিলা সংগ্রাম কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হন এবং গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেন সুফিয়া কামাল।

১৯৭০ সালে তিনি মহিলা পরিষদ প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৭১ সালের মার্চে অসহযোগ আন্দোলনে নারীদের মিছিলে নেতৃত্ব দেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় তার ধানমন্ডির বাসভবন থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা দেন। স্বাধীন বাংলাদেশে নারী জাগরণ ও নারীদের সমঅধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামেও তিনি উজ্জ্বল ভূমিকা পালন করেন।

১৯৯০ সালে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণসহ কারফিউ উপেক্ষা করে নীরব শোভাযাত্রা বের করেন।

তার গ্রন্থের মধ্যে ‌‌সাঁঝের মায়া, মন ও জীবন, শান্তি ও প্রার্থনা, উদাত্ত পৃথিবী ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এছাড়া সোভিয়েতের দিনগুলি এবং একাত্তরের ডায়েরি তার অন্যতম ভ্রমণ ও স্মৃতিগ্রন্থ।

সুফিয়া কামাল দেশ-বিদেশের ৫০টিরও বেশি পুরস্কার লাভ করেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য বাংলা একাডেমি পুরস্কার, সোভিয়েত লেনিন পদক, একুশে পদক, বেগম রোকেয়া পদক, জাতীয় কবিতা পরিষদ পুরস্কার ও স্বাধীনতা দিবস পদক।

মুক্তিযুদ্ধসহ বাঙালির সমস্ত প্রগতিশীল আন্দেলনে ভূমিকা পালনকারী সুফিয়া কামাল ১৯৯৯ সালের ২০ নভেম্বর সকালে বার্ধক্যজনিত কারণে মৃত্যুবরণ করেন। সম্পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় ইচ্ছানুযায়ী তাকে আজিমপুর কবরস্থানে সমাহিত করা হয়।

বৈশাখী নিউজ/ বিসি

Share Now

এই বিভাগের আরও খবর