রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে মানবাধিকার পরিষদে রেজুলেশন সর্বসম্মতভাবে গৃহীত

আপডেট: July 13, 2021 |
print news

 

বরাবরের মতো রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদে উত্থাপিত সর্বশেষ রেজুলেশনে আপত্তি করেছে চীন। কিন্তু অন্যবারের মতো এবার তারা ততোটা কঠোর হয়নি। আপস-আলোচনায় ডিসোসিয়েট বা মৃদু আপত্তি বজায় রাখলেও রেজুলেশনটি পাস করার ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি বাংলাদেশের উন্নয়ন-বন্ধু চীন। ফলে চূড়ান্ত বিচারে সোমবার জেনেভায় মানবাধিকার পরিষদের ৪৭তম অধিবেশনে প্রস্তাবটি সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয়েছে।

এমনটাই জানিয়েছেন জেনেভাস্থ বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনের কর্মকর্তারা। মিশনের দাবি, ২০১৭ সালের ২৫শে আগস্ট সীমান্তে রোহিঙ্গা ঢল এবং লাখ লাখ বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিকের বাংলাদেশে অস্থায়ী আশ্রয় গ্রহণের পর এবারই প্রথম জাতিসংঘে রোহিঙ্গা বিষয়ক কোনো রেজুলেশন (প্রস্তাব) বিনা ভোটে, সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হলো। এটাকে বাংলাদেশের কূটনৈতিক প্রচেষ্টার বড় সাফল্য আখ্যা দিয়ে পদস্থ কূটনীতিকরা আশা করছেন, সেই বিবেচনায় পাস হওয়া প্রস্তাবটি বাংলাদেশের ঘাড়ে জগদ্দল পাথরের মতো চেপে রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে মাইলফলক হবে। বাংলাদেশ মিশনের বিজ্ঞপ্তি মতে, প্রস্তাবে খোলাসা করেই বলা হয়েছে- অবর্ণনীয় নির্যাতনের শিকার রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর পক্ষে জবাবদিহিতা ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা এবং বাংলাদেশে মানবিক আশ্রয় পাওয়া বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিকদের দ্রুত রাখাইনে তাদের আদি নিবাসে প্রত্যাবাসনই চলমান সঙ্কটের টেকসই সমাধান। বিজ্ঞপ্তি মতে, মানবাধিকার পরিষদের চলমান অধিবেশনে বাংলাদেশের উদ্যোগে ইসলামিক সম্মেলন সংস্থা (ওআইসি)-এর সদস্য রাষ্ট্রগুলোর পক্ষে ‘রোহিঙ্গা মুসলিম ও মিয়ানমারের অন্যান্য সংখ্যালঘুদের মানবাধিকার পরিস্থিতি’ শীর্ষক প্রস্তাবটি উত্থাপিত হয়।

শুরুতে মিয়ানমারের পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রস্তাবটির বিষয়ে সদস্যদের মধ্যে মতভিন্নতা থাকলেও নিবিড় ও সুদীর্ঘ আপস-আলোচনায় শেষ পর্যন্ত ঐকমত্যে পৌছানো সম্ভব হয়েছে। যার ফলশ্রুতিতে সর্বসম্মতভাবে রেজুলেশনটি পরিষদে গৃহীত হয়। রেজুলেশনে বিতাড়িত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর আশ্রয়ের জন্য বাংলাদেশ সরকারের ভূয়সী প্রশংসা করা হয়েছে। এছাড়া, তাদের মিয়ানমারে ফেরত যাওয়া পর্যন্ত এ গুরুভার বহনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে মানবিক সহায়তা প্রদান অব্যাহত রাখার আহবান উন্মুক্ত রাখা হয়। গৃহীত প্রস্তাবে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে যৌন অপরাধসহ সকল প্রকার নির্যাতন, মানবতা-বিরোধী অপরাধ ও যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত ও দায়ী ব্যক্তিদের জাতীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিচার ব্যবস্থার আওতায় আনা ও তদন্ত প্রক্রিয়া জোরদার করার প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়। এ প্রেক্ষিতে, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত এবং আন্তর্জাতিক আদালতে চলমান বিচার প্রক্রিয়াকেও সমর্থন জানানো হয়। এছাড়া, প্রস্তাবটিতে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে চলমান সকল প্রচেষ্টাকে স্বাগত জানিয়ে এরূপ পরিস্থিতিতে করণীয় নির্ধারণে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের এখতিয়ারের কথা পুনর্ব্যক্ত করা হয়।

প্রস্তাবে জাতিসংঘ মানবাধিকার হাইকমিশনারকে মিয়ানমার বিষয়ক ‘নিরপেক্ষ আন্তর্জাতিক তথ্যানুসন্ধানী মিশন’-এর সুপারিশসমূহ বাস্তবায়নের অগ্রগতির উপর মানবাধিকার পরিষদ এবং জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে নিয়মিত প্রতিবেদন উপস্থাপন নিশ্চিত করার অনুরোধ জানানো হয়। এছাড়া, এ প্রস্তাব গ্রহণের মধ্য দিয়ে ‘রোহিঙ্গা মুসলিম ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের মূল কারণ’ বিষয়ে মানবাধিকার পরিষদে একটি প্যানেল আলোচনা অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত হয়। প্রস্তাবটির ওপর আলোচনায় জেনেভায় নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ও স্থায়ী প্রতিনিধি এম মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, মানবিক বিবেচনায় নির্মম নির্যাতনের শিকার রোহিঙ্গাদের জন্য প্রায় ৪ বছর আগে বাংলাদেশের সীমানা এবং হৃদয় উম্মুক্ত করে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় যে, দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হলেও মিয়ানমারের অসহযোগিতা এবং অনীহার কারণে অদ্যাবধি একজন রোহিঙ্গাকেও রাখাইনে ফেরত পাঠানো সম্ভব হয়নি। যদিও বাস্তুচ্যুতরা নিজ দেশে ফিরতে এবং সুন্দর ভবিষ্যৎ নিশ্চিতে মুখিয়ে রয়েছে। নিরাপদ ও টেকসই প্রত্যাবাসনে মিয়ানমারকে বাধ্য করতে তারা বিশ্ববাসীর অভিন্ন এবং জোরালো পদক্ষেপ চাইছে। রাষ্ট্রদূত রহমান আরও বলেন, সেই প্রেক্ষাপটে রোহিঙ্গা সঙ্কটের টেকসই সমাধান এবং জাতিগতভাবে নির্মুলের চরম ঝুঁকিতে থাকা ওই জনগোষ্ঠির মানবাধিকার সুরক্ষার বিষয়টি জাতিসংঘের আলোচ্যসূচিতে অগ্রাধিকারে রাখা প্রয়োজন। আলোচনায় রাষ্ট্রদূত মিস্টার রহমান স্পষ্ট করেই বলেন, মিয়ানমারের ঘোলাটে রাজনৈতিক পরিস্থিতির সমাধান অবশ্যই কাম্য। কিন্তু সেই সমাধানে নজর দিতে গিয়ে রোহিঙ্গাদের ওপর থেকে বিশ্ব সম্প্রদায়ের।

বৈশাখীনিউজ/ ইডি

Share Now

এই বিভাগের আরও খবর