রাণীশংকৈলে ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যু

আপডেট: November 3, 2024 |
inbound5858736937229888707
print news

জাহাঙ্গীর আলম, ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি: ডাক্তারের ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যুর কারণ দেখিয়ে ডাক্তারের কাছে ৬০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে বিএনপি’র ওয়ার্ড সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে।

স্বজন হারিয়ে শোকাহত পরিবার , অথচ তারা জানেন না তাদের রোগীকে নিয়ে এধরনের জঘন্য কাজ করেছে স্হানিয় নেতারা। বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হলে নিহতের স্বজন ও এলাকার মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।

ঘটনাটি ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলার ৭ নং রাতোর ইউনিয়নের ৯ ওয়ার্ড বাংলাগড় নামক এলাকায়।

জানা গেছে,গত ৩১ অক্টোবর (বৃহস্পতিবার) সকাল এগারোটায় বাংলাগড় বেকাম নিবাসী আব্দুল বারেকের ছোট ছেলে আবু বক্কর সিদ্দিক (৩২) নিজ বাড়িতে গাছ থেকে পড়ে অসুস্থ হন।

পড়ে তাকে চিকিৎসার জন্য বাংলাগড় বাজারে হাতুরে ডাক্তার চিরন্ত কুমার রায়ের দোকানে নিয়ে যায় স্বজনরা।

পড়ে তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে অবস্থার অবনতি দেখে উন্নত চিকিৎসার জন্য মেডিকেলে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন হাতুরে ডাক্তার চিরন্তন রায়।

পরে স্বজনরা পীরগঞ্জ উপজেলা সাস্হ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

নিহতের স্বজনদের সাথে কথা বলে জানা যায়,গত বৃহস্পতিবার গাছ থেকে পড়ে হঠাৎ আবু বক্কর সিদ্দিক অসুস্থ হয়ে পড়ে।

এতে তাৎক্ষণিক চিকিৎসার জন্য বাংলাগড় বাজারে চিরন্তন রায়ের কাছে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়।

পরে অবস্থার অবনতি হলে পীরগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

ডাক্তারের ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যু হয়েছে এধরনের কোন ধারণা আমাদের নেই। তার হায়াত ছিল না বলে সে বেঁচে নেই। ভুল চিকিৎসা দিয়ে থাকলে ডাক্তারের শাস্তি দাবি করছি।

তবে তার ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যু হয়েছে মর্মে ঐ ডাক্তারের কাছে টাকা হাতিয়ে নেয়ার বিষয়টি শুনে হতবাক হয়েছি,যা দুঃখজনক।

টাকা নেয়ার বিষয়টি সঠিক হলে আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি, টাকা লেনদেনের সাথে জড়িত সকলের শাস্তি দাবি করছি।

এঘটনায় গ্রাম্য ডাক্তার চিরন্ত কুমার রায় জানান,গত বৃহস্পতিবার আমার দোকানে নিহত ব্যক্তি আবু বক্করকে অসুস্থ অবস্থায় নিয়ে আসে তার স্বজনরা।

আমি প্রাথমিক চিকিৎসা হিসেবে তার প্রেসার মেপে দেখি তার প্রেসার লো। আমি তখনই তার ভাই আবুল কাশেমকে উন্নত চিকিৎসার জন্য মেডিকেলে নেয়ার পরামর্শ দিই। কিন্তু তিনি আমাকে এখানেই চেষ্টা করতে বলেন।

রোগীকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বুকে ও পেটে ব্যথার কথা বলে।পরে আমি প্রেসার বাড়ার জন্য কটসন, ব্যাথা নাশক এলজিন ও গ্যাসের রেমু নামক ইঞ্জেকশন ব্যবহার করি।

পরে রোগীর অবস্থা আশঙ্কাজনক দেখে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিই। পরে জানতে পারি তিনি মারা গেছেন।

নিহতের দাফনকার্য সম্পন্ন করার পর দিন স্হানিয় ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি রুবেল, সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর এবং স্হানিয় ভুগি রাম ও শিশু ঋষি নামে কয়েকজন আমাকে ডাকেন এবং বলেন আমার ভুল চিকিৎসায় নাকি রোগীর মৃত্যু হয়েছে।

অথচ আমি কোন ভুল চিকিৎসা দেয়নি এবং রোগীর স্বজনদেরও কোন অভিযোগ নেই।

কিন্তু তারপরও ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আমাকে হুমকি দিয়ে বলে যে তোমার চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যু হয়েছে, পাঁচ লাখ টাকা দিতে হবে নয়তো তোমার দোকান ভাঙচুর করে জ্বালিয়ে দেয়া হবে। পরক্ষনেই ভুগি রাম বলে উঠে এতটাকা কথায় পাবে।

পঞ্চাশ হাজার টাকা দিবে। পরে বিএনপির ওয়ার্ড সভাপতি রুবেল বলে, এই টাকা আমরা নিবোনা নিহতের দুজন এতিম ছেলে আছে তাদেরকে দিব।

পরে ষাট হাজার টাকা দেয়ার কথা বলে। আমি দিতে অস্বীকার করলে আমাকে এলাকা ছাড়া করবে বলে হুমকি প্রদান করে। পরে আমি নিরুপায় হয়ে ষাট হাজার টাকা সেখানে তাদের বুঝে দিই।

পরে আমাকে নিয়ে তারা নিহতের বাড়িতে যায় এবং সেখানে টাকার কথা উল্লেখ করতে নিষেধ করে। তারা নাকি সেটা নিহতের পরিবারের সাথে মিমাংসা করেছে।

পরে জানতে পারলাম নিহতের পরিবার এ বিষয়ে জানেন না এবং এধরনের তাদের কোন অভিযোগ নেই।

বিএনপির ৭ নং রাতোর ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ড সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম বলেন,আমি এ বিষয়ে কিছুই জানি না।কে বা কাহারা উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভাবে আমার বিরুদ্ধে এধরনের অপপ্রচার চালাচ্ছে।

তবে ডাক্তারের সাথে রোগীর চিকিৎসা বিষয়ে কথা হয়েছে। এখানে হুমকি ধামকি সহ টাকা নেওয়ার বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। ঐ ডাক্তার নিজে বাঁচার জন্য হয়তো আমাদের উপর এমন মিথ্যা অপবাদ দিচ্ছে।

এঘটনায় বিএনপির ৯ নং ওয়ার্ড সভাপতি রবিউল ইসলাম রুবেল ঘটনার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, বিষয়টি ডাক্তারকে অবগত করা হয়েছে যে এধরনের রোগীদের সাথে সাথে রেফার্ড দিয়ে উন্নত চিকিৎসা পরামর্শ দেয়ার জন্য।

কারণ তারা এমবিবিএস ডাক্তার নয়,যে রোগী দেখলেই চিকিৎসা দিতে হবে। সুস্থ ছেলেটি হঠাৎ গাছ থেকে পড়ে অসুস্থ হওয়ার কারণ গ্রাম্য চিকিৎসক জানতে পারে না।

আবার এমতাবস্থায় তিনি কয়েকটি ইঞ্জেকশন পুশ করেছেন। রোগীর অবস্থা আশঙ্কাজনক দেখে তিনি মেডিকেলে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন।

মেডিকেলে নেয়ার সাথে সাথে রোগীর মৃত্যু হয়।তাই সবার ধারণা যে ঐ ডাক্তারের দেয়া চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যু হতে পারে। আমরা কয়েকজন মিলে ডাক্তারকে এধরনের চিকিৎসা দেয়া থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দিই।

এখানে টাকার বিষয়টি অপ্রাসঙ্গিক। টাকা কাকে দিয়েছেন সেটা ঐ ডাক্তারকে প্রমাণ করতে হবে।

উপজেলার ৭ নং রাতোর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আকতার হোসেন জানান, বিষয়টি আমি শুনেছি। তবে সত্যতা যাচাই করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) একটি সচ্ছ রাজনৈতিক সংগঠন। এধরনের জঘন্যতম কাজ দল কখনো বরদাস্ত করবে না।

দলের নাম ব্যবহার করে কোন নেতাকর্মী এধরনের কোন অপরাধ করে থাকলে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হবে এবং তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Share Now

এই বিভাগের আরও খবর