লকডাউন পরবর্তী সময়ে কোভিড-১৯ প্রতিরোধে নিরাপত্তা সতর্কতা

সময়: 8:09 pm - June 2, 2020 | | পঠিত হয়েছে: 4 বার

করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে সরকার ঘোষিত লকডাউন শেষে গত রবিবার থেকে সরকারি-বেসরকারি অফিস খুলেছে। দীর্ঘ দুই মাসের লকডাউন শেষে অনেকেই তাদের নিজ নিজ অফিসে ফিরতে শুরু করেছেন। আপনিও কী তাদের মধ্যে একজন, যিনি দীর্ঘ লকডাউনে অবকাশ যাপন শেষে কর্মস্থলে ফিরছেন?

আগামী কয়েকমাসেও মানবসমাজের ওপর নতুন করোনাভাইরাসের (সার্স-কোভ-২) ধ্বংসলীলা অব্যাহত থাকবে বলে মনে হচ্ছে। যদিও বিজ্ঞানীরা এর প্রতিষেধক অন্বেষণ করে চলেছেন। তবে এটি কখন নাগাদ সাধারণ মানুষের হাতের নাগালে আসবে সে সম্পর্কে কারোরই কাছেই নিশ্চিত কোনো তথ্য নেই। অন্যদিকে, কোনো দেশের সরকারের পক্ষেই অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য লকডাউন দিয়ে রাখা সম্ভব নয়। তাই, এখন নতুন বাস্তবতায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে সাধারণ জীবনযাত্রায় ফিরে যেতে হবে এবং সতর্কতা বজায় রেখে জীবিকা নির্বাহের কাজ পুনরায় শুরু করতে হবে। আজকের এ নিবন্ধে, আমরা কোভিড-১৯ সংক্রমণ থেকে বাঁচতে লকডাউন পরবর্তী সময়ে নিজেদের সুরক্ষার জন্য মেনে চলা কিছু সতর্কতামূলক বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে যাচ্ছি।

ব্যক্তিগত সুরক্ষা সতর্কতা

-প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম সাথে রাখুন

আপনি যখনই বাড়ির বাইরে যাবেন তখনই পরিষ্কার মাস্কটি সঠিকভাবে পরে নিন। আরও বেশি সুরক্ষার জন্য আপনি ফেস শিল্ড, গগলস এবং হেড-কভার পরতে পারেন। আপনার প্যান্টের পকেটে বা হাতের ব্যাগে অ্যালকোহলজাতীয় হ্যান্ড স্যানিটাইজার বা সাবান নিতে ভুল করবেন না। ঘড়ি, গহনা ইত্যাদির মতো কোনো ধাতব সামগ্রী পরা এড়িয়ে চলুন। ঘরের বাইরে থেকে ফিরে ধুয়ে দিতে পারেন এমন পোশাক পরুন। ভাইরাসের সংক্রমণ এড়ানোর জন্য চকরিজীবীরা সথে এমন ব্যাগ নিতে পারেন যা সহজেই ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার করা যায়।

– খাবার সুরক্ষা সাবধানতা

চকরিজীবীদের অনেকেরই চা-বিরতি এবং দুপুরের খাবারের সময় চা স্টল বা অফিসের আশপাশের রেস্তোরাঁগুলোতে যাওয়ার প্রবণতা রয়েছে। রেস্তোরাঁর খাবার, বাসন এবং সাধারণ বসার স্থানগুলো থেকেও এ ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটতে পারে। অফিসে আসার সময় বাড়ি থেকেই আপনার খাবার এবং পানি নিয়ে যাওয়াই এসময় বুদ্ধিমানের কাজ হবে।

তারপরও, আপনি যদি এখনও কোনো রেস্তোরাঁ বা চায়ের দোকানে খেতে চান, তবে পরিবেশনের আগে আপনার চায়ের কাপ বা প্লেট বা চামচগুলো সঠিকভাবে ধুয়ে নেয়া হয়েছে কিনা তা নিশ্চিত করুন। এছাড়াও প্রকাশ্যে তামাক সেবন আপনার ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে।

– স্মার্টফোনের নিরাপত্তায় সাবধানতা

আধুনিক জীবন ব্যবস্থায় মোবাইল ফোন আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। আমরা স্মার্টফোন ব্যবহার না করে ঘণ্টা খানেক পার করতে আমাদের অনেকের কষ্ট হয়ে যায়। তাই এসময় আপনার হাত পরিষ্কার না করে ফোন স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকুন। আপনার স্মার্টফোনটি এমন কোনো জায়গায় রাখবেন না যেখানে অন্যান্য লোকজনের সংস্পর্শে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। আপনি বাড়ির বাইরে যাওয়ার সময় আপনার স্মার্টফোনটি জিপলক ব্যাগে রেখে দিতে পারেন। বাইর থেকে আপনার বাসায় ফেরার পর সঠিকভাবে স্যানিটাইজ করার আগে বাচ্চাদের স্মার্টফোনে হাত দিতে দেবেন না।

সামাজিক সুরক্ষায় সাবধানতা

– সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখুন

যেসব জায়গায় কমপক্ষে ৩ ফুট দূরত্ব বজায় না রেখে মানুষজন ভিড় করছে সেসব স্থান এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন। জরুরি প্রয়োজনে আপনাকে বাড়ির বাইরে যেতে হতেই পারে। আপনার মতো আরও অনেক মানুষ বাইরে ঘোরাঘুরি করছে। আপনি রাস্তায় যাতায়াত করার সময় বা বাসস্ট্যান্ডে অপেক্ষা করার সময় বা কোনো ব্যাংক যাওয়ার সময় বা মুদি দোকানে কেনাকাটা করেতেই যান না কেন, সবসময় ভিড় এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন।

– জনসমাগমের স্থান এড়িয়ে চলুন

আপনার প্রতিদিনের শিডিউল এমন দক্ষতার সাথে তৈরি করুন, যাতে আপনি জনাকীর্ণ স্থানগুলো এড়িয়ে চলতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ, আপনি অফিস শুরু হওয়ার সময়ে বাইরের কাজগুলো শেষ করে নিতে পারেন। বিভিন্ন সেবার জন্য আপনার দেয়া বিলগুলো লাইনে দাঁড়িয়ে পরিশোধ করার পরিবর্তে অনলাইনে বা ইলেক্ট্রনিক উপায়গুলো বেছে নিন। আপনি যদি অনলাইন মুদি দোকান এবং ফার্মেসি থেকে আপনার প্রয়োজনীয় মুদি সরঞ্জাম, খাদ্য ও ওষুধ কিনতে পারেন সেটাই আপনার জন্য মঙ্গল হবে। তবে, আপনাকে ব্যক্তিগতভাবে গিয়েই কেনাকাটা করতে হয় তবে বেশি ভিড়ের মুদি দোকানে না গিয়ে অপেক্ষাকৃত কম ভিড়ের দোকান থেকে কেনা এবং সাপ্তাহান্তে একবার মুদি কেনাকাট করার চেষ্টা করুন।

– মাস্ক ছাড়া লোকদের এড়িয়ে চলুন

ব্যক্তিমানুষ হিসেবে আপনিও একটি সমাজের অংশ। ব্যক্তিগত সুরক্ষায় প্রাক-সতর্কতা বেছে নেয়ার পাশাপাশি আপনাকে সমাজের অন্যদেরকেও মুখে মাস্ক পরতে উৎসাহিত করতে হবে। যদিও তাদের মধ্যে কেউ মাস্ত পরতে অস্বীকৃতি জানায় তবে আপনি তাদের কাছ থেকে সেবা নেয়া থেকে বিরত থাকুন। ধরুন, কোনো ড্রাইভার যদি মাস্ক না পরে থাকে তবে সে বাস বা সিএনজি বা রিকশা চড়া থেকে এড়িয়ে চলুন। একইভাবে, সেসব মুদি দোকান থেকে পণ্য কিনবেন না, যেখানে মুদি দোকানদার কোনো মাস্ক পরেনি। আপনি যদি কোনো দোকানের মালিক বা মুদিওয়ালা হন তবে আপনিও ক্রেতাদের ফেস মাস্ক পরতে বলুন। কর্মক্ষেত্রেও আপনার সহকর্মীদের এবং অফিস পরিচারকদের মাস্ক পরতে উৎসাহিত করুন। যদি সম্ভব হয়, তবে আপনি আপনার বন্ধু, সহকর্মী বা অন্যান্য ব্যক্তিদের জন্য প্রয়োজন বোধে কিছু অতিরিক্ত নতুন ফেস মাস্ক সাথে রাখতে পারেন।

পরিবহন সুরক্ষায় সাবধানতা

– প্রচণ্ড ভিড়ের সময়গুলো এড়িয়ে চলুন

কোভিড-১৯ সংক্রমণ এড়ানোর সবচেয়ে ভালো উপায় হলো বাড়ি থেকে কাজ করা। তবে, আপনাকে যদি অফিসে গিয়ে কাজ করেত হয় তবে আপনার কর্তৃপক্ষের সাথে পরামর্শ করুন এবং আপনার কাজের সময়সূচি পরিবর্তন করে নেয়ার চেষ্টা করুন। মনে রাখবেন, ভিড়ের সময় রাস্তায় অতিরিক্ত মানুষ থাকবেই। তদুপরি, অফিসে দিনের কাজ শুরু হওয়ার ও শেষ হওয়ার সময়ে রাস্তায় যানবাহনের স্বল্পতা থাকবে। সম্ভব হলে যেসময় ট্রাফিক কম হবে সে সময় অফিসে যাওয়ার জন্য বেছে নিন।

– গণপরিবহন এড়িয়ে চলুন

জনগণের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করেত আমাদের সরকার গণপরিবহনে দূরত্বের বজায় রাখার জন্য কঠোর বিধি জারি করেছে। এদিকে, সরকারের এ সিদ্ধান্তের ফলে পরিবহন ভাড়াও বাড়ানো হয়েছে। অন্যদিকে, সময়মতো পরিবহনে চলাচল করা জনগণের জন্য আরও কঠিন হয়ে পড়েছে। তাই আপনি যদি গণপরিবহনে যাতায়াত না করে বিকল্প ব্যবস্থা করতে পারেন তবে তা বুদ্ধিমানের কাজ হবে। ধরুন, কাছাকাছি দূরত্বের হলে আপনি হেঁটে যেতে পারেন। যদি তা সম্ভব না হয় করোনা কারণে সৃষ্ট এ পরিস্থিতির সমাধান না হওয়া পর্যন্ত রিকশা, মোটরসাইকেল বা সিএনজি অটোরিকশা দিয়ে যাতায়াত করতে পারেন।

– যানবাহনে চলাচলে সতর্কতা

আপনার বাসা থেকে কাজের জায়গা যদি অনেক দূরে হয় তবে আপনি কী করবেন? আপনার যদি অফিসে যাতায়াত করার জন্য গণপরিবহনের বিকল্প অন্য কোনো উপায় না থাকে তবে সঠিক সুরক্ষা সতর্কতা অবলম্বন করুন। বাসে যাতায়াতের সময় এর হ্যান্ডল, সিট, জানালার পর্দা বা অন্যান্য সাধারণ স্থানগুলো স্পর্শ না করার চেষ্টা করুন। স্বাস্থ্যবিধি না মেনে চলা জনাকীর্ণ বাসে চড়া থেকে বিরত থাকুন। যেকোনো গণপরিবহনে যাতায়াতের সময় মাস্ক, ফেস শিল্ড, হ্যান্ড গ্লাভস, গগলসসহ ব্যক্তিগত সতর্কতা বজায় রাখুন।

কর্মক্ষেত্রের নিরাপত্তায় সাবধানতা

– কর্মক্ষেত্রে দূরত্ব বজায় রাখুন

আপনার কর্মস্থলে কর্মচারী এবং কর্মকর্তাদের মধ্যে দূরত্ব বজায় রাখতে কাজের ডেস্কগুলো পুনরায় সাজিয়ে নিতে কর্তৃপক্ষের সাথে পরামর্শ করুন। যদি কাজের সময়ে প্রতি শিফটের কর্মীদের সংখ্যা সীমিত করার জন্য বিভিন্ন শিফটে ভাগ করা যায় তবে তা বুদ্ধিমানের কাজ হবে। কর্মক্ষেত্রে সহকর্মীদের সাথে যোগাযোগ করার সময়ও দূরত্ব বজায় রাখার পরামর্শ দিতে পারেন।

– ডেস্ক পরিষ্কার রাখুন

অফিসে কাজ শুরু করার আগে আপনি এক টুকরো পরিষ্কার কাপড় বা টিস্যু দিয়ে আপনার ওয়ার্ক-ডেস্ক এবং অন্য যেসব সরঞ্জাম (যেমন কম্পিউটার কীবোর্ড, মাউস, হেডফোন, পেনড্রাইভ ইত্যাদি) স্পর্শ করতে হয় তা মুছে নিন। অপরিষ্কার কোনো কিছুর সংস্পর্শে না আসার চেষ্টা করুন। ধরুন, আমাদের অনেকের ওয়ার্ক ডেস্কে কনুই হেলিয়ে দেয়া বা দেয়ালে হেলান দিয়ে বসে থাকা বা চেয়ারে বসার সময় সিট হ্যান্ডেল স্পর্শ করার প্রচলিত অভ্যাস রয়েছে। এগুলো স্পর্শ করার আগে সতর্ক হোন।

– সাধারণ স্থানগুলো স্যানিটাইজিং করুন

প্রতিটি দপ্তর এবং সেবা কেন্দ্রের প্রবেশদ্বার এবং রিসিপশন স্থানগুলোতে যথাযথ স্যানিটাইজিং ব্যবস্থা রাখা উচিত। কর্মক্ষেত্রে, সাধারণভাবে স্পর্শযোগ্য জায়গাগুলো যেমন ফ্লোর স্পেস, ওয়াশরুমের পানির কল, লাইফ-বাটন, ডোর-হ্যান্ডলস, এসি রিমোট ইত্যাদি নির্দিষ্ট বিরতিতে সঠিকভাবে স্যানিটাইজ করা উচিত। আপনি এবং আপনার সহকর্মীরা বাই-রোটেশন এ বিষয়গুলো তদারকি করতে পারেন বা কর্তৃপক্ষের সাথে পরামর্শ করে সংশ্লিষ্ট কোনো ব্যক্তিকে দায়িত্ব দিতে পারেন যিনি সঠিকভাবে স্যানিটাইজিংয়ের দায়িত্ব পালন করবেন।সূত্র: ইউএনবি

বৈশাখী নিউজজেপা

Share Now

এই বিভাগের আরও খবর