মেয়ের জন্মের খুশিতে চাঁদে জমি কিনলেন টাঙ্গাইলের সোহেল

আপডেট: October 27, 2021 |

প্রথম মেয়ে সন্তান জন্মের খুশিতে চাঁদে জমি কিনে মেয়েকে উপহার দিয়েছেন টাঙ্গাইলের সখিপুর উপজেলার বাসিন্দা আল-আমিন ইসলাম সোহেল। তিনি উপজেলার দাড়িয়াপুর ইউনিয়নের প্রতিমা বংকী গ্রামের সাদিকুর রহমানের ছেলে।

বুধবার (২৭ অক্টোবর) সকালে স্ত্রীর হাতে চাঁদে কেনা জমির কাগজপত্র বুঝিয়ে দিয়েছেন তিনি।

আল-আমিন সোহেল বলেন, গত ৩১ আগস্ট আমার সংসার আলোকিত করে মেয়ে সন্তানের জন্ম হয়। তার নাম রেখেছি আলিশা জাহান। মেয়ে জন্মের পর থেকেই তাকে ব্যতিক্রমী কী উপহার দেওয়া যায় এমন একটি প্রশ্ন মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিল। আমেরিকাতে এক মামা বসবাস করেন। পরে তার মাধ্যমে অনলাইনে (লুনারল্যান্ড ডটকম) চাঁদে এক একর জমির অর্ডার দিয়েছিলাম। সেই জমির কাগজপত্র আজ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছি। বর্তমানে মেয়ে আলিশা জাহান অপ্রাপ্তবয়স্ক থাকায় আমার নামেই জমি ক্রয় করেছি। প্রাপ্তবয়স্ক হলেই তার নামে কাগজপত্র করা হবে।

তিনি আরও জানান, জমি ক্রয় করতে সব মিলিয়ে দুইশ ডলার খরচ হয়েছে। যা বাংলাদেশী মুদ্রায় প্রায় ১৭ হাজার টাকা। মেয়েকে চাঁদের জমি উপহার দিতে পেরে খুব ভালো লাগছে। পরিবারের লোকজনও খুশি হয়েছে।

দাড়িয়াপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি শাহ আলম সিকদার বলেন, আমাদের সমাজে কিছু মানুষ এখনো মেয়ে সন্তানকে এক প্রকার বোঝা মনে করেন। সেখানে আলামিন নামের ওই যুবক মেয়ে সন্তান জন্মের খুশিতে চাঁদের জমি কিনে উপহার দিয়েছেন। বিষয়টি অবশ্যই সমাজের অন্যান্যদের জন্য ইতিবাচক হিসেবে কাজ করবে এবং কুসংস্কার দূর করতে উৎসাহিত করবে।

এ বিষয়ে দাড়িয়াপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আনছার আলী আসিফ জানান, বিষয়টি আমি শুনেছি, তবে কীভাবে আর কার মাধ্যমে সে চাঁদের জমি কিনেছেন সে বিষয়টি আমি জানি না।

 

তবে বিবিসি ও ইকোনমিক টাইমসের প্রতিবেদনে দেখা যায়, ১৯৭৯ সালে জাতিসংঘের উদ্যোগে ‘মুন অ্যাগ্রিমেন্ট’ নামে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, যেখানে বলা হয়, পৃথিবীর একমাত্র প্রাকৃতিক উপগ্রহটিকে শুধু বিশ্ববাসীর শান্তির স্বার্থে ব্যবহার করা যাবে এবং চাঁদে যদি কেউ কোনও স্টেশন স্থাপন করতে চায়, তাহলেও জাতিসংঘকে আগে জানাতে হবে।

মুন অ্যাগ্রিমেন্টে বলা হয়, ‘চাঁদ এবং এর প্রাকৃতিক সম্পদের সাধারণ উত্তরাধিকার সমগ্র মানবজাতি’ এবং কেউ যদি এসব সম্পদের অপব্যবহার করে, তাহলে তা প্রতিহত করার জন্য একটি আন্তর্জাতিক শাসন ব্যবস্থা তৈরি করা হবে। মুন অ্যাগ্রিমেন্টে যেহেতু চাঁদের উত্তরাধিকার হিসেবে ‘সমগ্র মানবজাতির’ কথা বলা হয়েছে, তাই অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন চাঁদে ব্যক্তিগত ও কর্পোরেট মালিকানা নিষিদ্ধ।

ওই চুক্তিতে বলা হয়েছে, চাঁদের কোনও খনিজ সম্পদের উত্তোলন এবং রক্ষণাবেক্ষণ একটি স্পেস ওয়াচডগ বা নিয়ন্ত্রকের অধীনে হতে হবে এবং এ থেকে যা লাভ হবে, তার একটা অংশ তৃতীয় বিশ্বের অনুন্নত দেশগুলোর বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে দেওয়া হবে। এই চুক্তিতে চাঁদে কোনও ধরনের অস্ত্র পরীক্ষাও নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

আন্তর্জাতিক ও দেশীয় গণমাধ্যমের সংবাদ এবং জাতিসংঘের ‘আউটার স্পেস ট্রিটি’ চুক্তি অনুযায়ী, চাঁদে কেউ জমি কিনতে পারে না। তবে কিছু দেশের নাগরিক আইন বা চুক্তির ফাঁক-ফোকর বের করে চাঁদ এবং অন্যান্য গ্রহ-উপগ্রহে জমি বিক্রির নাম করে পয়সা হাতিয়ে নিচ্ছে। যারা কিনছেন, তারা আসলে প্যাকেট ভর্তি বাতাসই কিনছেন!

বৈশাখী নিউজ/ এপি

Share Now

এই বিভাগের আরও খবর