মিয়ানমারে ৩০ জনকে হত্যা করে লাশ পুড়িয়ে দিলো জান্তা বাহিনী

আপডেট: December 26, 2021 |

মিয়ানমারের কাইয়া রাজ্যে নারী ও শিশুসহ ৩০ জনকে হত্যা করে লাশ পুড়িয়ে দিয়েছে দেশটির জান্তা সরকার নিয়ন্ত্রিত সামরিক বাহিনী। শনিবার স্থানীয় মানবাধিকার সংস্থা কারেননি হিউম্যান রাইটস গ্রুপের সূত্রে এই তথ্য জানা যায়।

এক ফেসবুক পোস্টে কারেননি হিউম্যান রাইটস গ্রুপ জানায়, শনিবার কাইয়া রাজ্যের প্রুসো শহরের কাছে মো সো গ্রামে এই ঘটনা ঘটে।

ফেসবুক পোস্টে সংস্থাটির পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘আমরা কঠিনভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী এই অমানবিক ও নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানাচ্ছি।’

এদিকে এই ঘটনায় সামরিক বাহিনীর পক্ষ থেকে রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমে জানানো হয়, ওই গ্রামে অবস্থান করা ‘অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের’ মধ্যে বেশ কয়েকজনকে গুলি করে হত্যা করেছে। তবে মোট কতজনকে হত্যা করা হয়েছে, তা জানানো হয়নি।

সামরিক বাহিনী জানায়, ওই অস্ত্রধারীরা সাতটি গাড়িতে ছিলো এবং সামরিক বাহিনী থামতে বলার পরেও তারা থামেনি।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ছবিতে দেখা যায়, সামরিক বাহিনীর জ্বালিয়ে দেয়া ট্রাকের মধ্যে পুড়ে যাওয়া লাশ পড়ে রয়েছে।

স্থানীয় জান্তাবিরোধী সশস্ত্র সংগঠন কারেননি ন্যাশনালিটিস ডিফেন্স ফোর্সের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, নিহতরা তাদের সদস্য নন। বরং তারা সংঘাত থেকে বাঁচতে পালানো বেসামরিক শরণার্থী।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের কাছে সংগঠনটির এক নেতা নাম গোপন রাখার শর্তে বলেন, ‘শিশু, নারী ও বৃদ্ধসহ বিভিন্ন আকৃতির এই লাশ দেখে আমরা মর্মাহত।’

স্থানীয় এক বাসিন্দা রয়টার্সকে নাম গোপন রাখার শর্তে বলেন, শুক্রবার রাতের এই ঘটনা সম্পর্কে তিনি জানতে পারেন। কিন্তু গোলাগুলি চলতে থাকায় তিনি সেখানে যেতে পারেননি।

রয়টার্সকে ফোনে তিনি বলেন, ‘আমি সকালে সেখানকার অবস্থা দেখার জন্য যাই। আমি পুড়ে যাওয়া লাশের সাথে সাথে নারী ও শিশুর ছড়িয়ে পড়ে থাকা পোশাক দেখতে পাই।’

১ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী তাতমাদাও দেশটিতে সেনা অভ্যুত্থান ঘটায় এবং প্রেসিডেন্ট উইন মিন্ট ও স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চিসহ রাজনৈতিক নেতাদের গ্রেফতার করে। সাথে সাথে দেশটিতে এক বছরের জন্য জরুরি অবস্থা জারি করা হয়। পরে ১ আগস্ট জরুরি অবস্থার মেয়াদ ২০২৩ সালের আগস্ট পর্যন্ত বাড়ানোর ঘোষণা দেন জান্তা প্রধান জেনারেল মিন অং লাইং।

গত বছরের নভেম্বরে দেশটিতে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে বিতর্কের জেরে এই অভ্যুত্থান ঘটায় সামরিক বাহিনী।

সেনা অভ্যুত্থানের প্রতিবাদে ৬ ফেব্রুয়ারি থেকে মিয়ানমারের বিভিন্ন শহরেই বিক্ষোভ শুরু হয়। বিক্ষোভকারীরা অং সান সু চিসহ বন্দী রাজনৈতিক নেতাদের মুক্তির পাশাপাশি সামরিক শাসন প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে আসছেন। শান্তিপূর্ণভাবে শুরু হওয়া অহিংস বিক্ষোভকে সামরিক উপায়ে জান্তা সরকার দমন করতে গেলে বিক্ষোভকারীরাও বিভিন্ন স্থানে অস্ত্র হাতে নেয়।

গত ৭ সেপ্টেম্বর মিয়ানমারের জান্তাবিরোধী জাতীয় ঐক্য সরকার (এনইউজি) দেশের সাধারণ মানুষকে সামরিক জান্তার আক্রমণ থেকে রক্ষা করতে সর্বাত্মক যুদ্ধের ঘোষণা দেয়।

মিয়ানমারের সামরিক জান্তা ইতোমধ্যেই এনইউজি ও জান্তাবিরোধী যোদ্ধাদের ‘সন্ত্রাসী’ হিসেবে ঘোষণা করে দমন অভিযান চালিয়ে আসছে।

সূত্র : আলজাজিরা

Share Now

এই বিভাগের আরও খবর