মূল্যস্ফীতির কবলে ব্রিটিশরা, একবেলা কম খাচ্ছেন এক-চতুর্থাংশ মানুষ

আপডেট: May 23, 2022 |

ব্রিটেনে জীবনযাত্রার ব্যয় আকাশচুম্বী। এ কারণে অতিরিক্ত ব্যয়ের সঙ্গে আয়ের সামঞ্জস্য করতে হিমশিম খাচ্ছেন ব্রিটিশরা। ক্ষুধা থাকা সত্ত্বেও আহার এড়িয়ে চলছেন দেশটির ২৭ শতাংশ মানুষ। দিনে অন্তত একবেলা না খেয়ে থাকতে হচ্ছে তাদের। সামনে আসছে কঠিন দিন। আগামী মাসগুলোতে খাদ্য ও জ্বালানির মতো মৌলিক চাহিদা মেটানোর ক্ষমতা নিয়ে উদ্বিগ্ন জনসাধারণ।

দেশটির ৭৫ শতাংশ মানুষ মনে করছেন জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির এ সংকট মোকাবিলায় তারা সরকারের পক্ষ থেকে কোনো সহায়তা পাচ্ছেন না। মঙ্গলবার প্রকাশিত স্থানীয় একটি সমীক্ষায় উঠে আসে এসব উদ্বেগময় তথ্য। প্যারিসভিত্তিক জরিপ সংস্থা ইপসোস ও স্কাই নিউজ যৌথভাবে সমীক্ষাটি পরিচালনা করে। চলতি মাসের ১১ ও ১২ তারিখে ১৬ থেকে ৭৫ বছর বয়সি দুই হাজার ৬১ জন মানুষের সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে এ ফল প্রকাশ করে ইপসোস।

সমীক্ষায় দেখা গেছে, জীবনযাত্রার ব্যয়বৃদ্ধি সংকটে খরচ কমাতে ২৭ শতাংশ মানুষ খাবার এড়িয়ে চলছেন। এ অবস্থায় তাদের গৃহীত অন্য পদক্ষেপগুলোর মধ্যে রয়েছে- সুপারমার্কেট পরিবর্তন (৪৪ শতাংশ), জ্বালানি বাঁচাতে গাড়ি কম চালানো (৪৪ শতাংশ), প্রচণ্ড ঠাণ্ডায়ও হিটিং মেশিন ব্যবহার করছেন না (৬৬ শতাংশ), কমদামি ওয়েবসাইট ব্যবহার (৩৯ শতাংশ), টিভি দেখা বন্ধ (২৯ শতাংশ), ধার করে সংসার চালাচ্ছেন (১৯ শতাংশ), কমিয়ে এনেছেন সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের ব্যয় (৫২ শতাংশ)। স্বাভাবিক কারণেই ব্রিটিশ সংখ্যাগরিষ্ঠরা জীবনযাত্রার সংকট এবং এর প্রভাব সম্পর্কে উদ্বিগ্ন। ১০ জনের মধ্যে ৯ জনই (৮৯ শতাংশ) পুরো দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে উৎকণ্ঠায় রয়েছেন- যাদের মধ্যে ৮৩ শতাংশ নিজেদের অস্তিত্ব সংকটে ভুগছেন। ৭৯ শতাংশ মানুষ উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তাদের স্থানীয় এলাকার মানুষের ওপর জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির প্রভাব নিয়ে।

জরিপের ২৮ শতাংশ মানুষ মনে করছেন উত্তর-পূর্ব ইয়র্কশায়ার, হাম্বার এবং বৃহত্তর লন্ডনে বসবাসকারী লোকেরা সম্ভবত আগামী ছয় মাসে জীবনযাত্রার ব্যয় সংকুলানে হিমশিম খাবেন। ৩০ শতাংশ মনে করেন, দক্ষিণ পূর্বে যারা রয়েছেন-তাদের অবস্থা অত খারাপ হবে না। প্রায় তিন-চতুর্থাংশ (৭৬ শতাংশ) ব্রিটিশরা মনে করেন রাজ্য সরকার তাদের স্থানীয় এলাকায় বসবাসের খরচের জন্য যথেষ্ট সহায়তা দিচ্ছে না। মাত্র ১০ শতাংশ বলেছেন যথাযথ সহায়তা পাচ্ছেন তারা এবং ৮ শতাংশ বলেছেন পর্যাপ্ত সহায়তা পাওয়া যাচ্ছে।

ইপসোসের রাজনৈতিক গবেষণার প্রধান গিডিয়ন স্কিনার বলেন, ‘ইপসোস পোলিংয়ে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ে উদ্বেগ ত্রিশ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে। সারা দেশে ব্রিটিশরা জীবনযাত্রার ব্যয়কে জাতীয়, স্থানীয় এবং ব্যক্তিগত অগ্রাধিকার হিসাবে দেখছে। মানুষের জীবনযাপনে উচ্চব্যয়ের সংকট দূর করতে বেশি বেশি পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য চাপ বাড়বে সরকারের ওপর।’ একটি প্রধান ব্রিটিশ ক্যাটারার মঙ্গলবার পৃথকভাবে জানিয়েছে কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে স্কুলগুলোকে।

তারা খাবারের পরিমাণ কমাতে বলেছে এবং ক্রমবর্ধমান মূল্যকে সমন্বয় করতে নিুমানের খাদ্য-উপাদান ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছে। ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের গভর্নর অ্যান্ড্রু বেইলি সোমবার বলেছিলেন, ইউক্রেনের যুদ্ধের কারণে ক্রমবর্ধমান দাম এবং খাদ্য ঘাটতির সমস্যাগুলো ব্রিটেন এবং বিশ্বের অন্যান্য অনেক অংশের জন্য একটি সত্যিকারের উদ্বেগের বিষয়।

ব্রিটিশ খুচরা বিক্রেতা মার্কস অ্যান্ড স্পেনসার মঙ্গলবার সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, এই বছরের শেষ নাগাদ খাদ্যমূল্যস্ফীতি আরও ১০ শতাংশ বাড়তে পারে। বুধবার প্রকাশিত ব্রিটেনের সরকারি পরিসংখ্যান বলছে খাদ্য ও জ্বালানির দাম বেড়ে যাওয়ায় এপ্রিলে ৪০ বছরের সর্বোচ্চ ৯.১ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। যে কারণে দেশের জীবনযাত্রার ব্যয় সংকট উদ্বেগ বাড়িয়েছে।

বৈশাখী নিউজ/ এপি

Share Now

এই বিভাগের আরও খবর