ইরাকে সহিংসতায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে অন্তত ৩০

আপডেট: August 31, 2022 |

ইরাকের রাজধানী বাগদাদে চলমান সহিংসতায় নিহত বেড়ে ৩০-এ দাঁড়িয়েছে। এদিকে সহিংসতার অবসান চেয়ে অনশন ধর্মঘট করছেন দেশটির প্রভাবশালী শিয়া নেতা মোকতাদা আল-সদর। তিনি বলেছেন, সহিংসতা ও অস্ত্রের ব্যবহার বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত অনশন ধর্মঘট চালিয়ে যাবেন তিনি। আল-সদরের ঘনিষ্ঠ এক আইনপ্রণেতার বরাত দিয়ে মঙ্গলবার (৩০ আগস্ট) এ খবর জানিয়েছে আল-জাজিরা।

ইরাকে প্রায় এক বছর ধরে চলমান রাজনৈতিক অচলাবস্থার জেরে সোমবার (২৯ আগস্ট) রাজনীতি থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণা দেন মোকতাদা আল-সদর। তার এ ঘোষণার পরই রাজধানী বাগদাদের রাস্তায় নেসে আসেন তার হাজার হাজার সমর্থক। তারা পার্লামেন্ট ভবন ও প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে ঢুকে পড়ে।

এতে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে আল-সদর সমর্থকদের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ শুরু হয়। এতে এখন পর্যন্ত অন্তত ৩০ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এছাড়াও আহত হয়েছেন আরও অর্ধ শতাধিক। সমর্থকদের ওপর নিরাপত্তা বাহিনীর বলপ্রয়োগ বন্ধের দাবিতে অনশন ধর্মঘট শুরু করেন আল-সদর।

কয়েক দশকের যুদ্ধ, নিষেধাজ্ঞা ও দুর্নীতির মহামারি থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে ইরাক। এ অবস্থায় আল-সদর ও প্রতিদ্বন্দ্বী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যকার রাজনৈতিক অচলাবস্থা দেশটিকে আরেক দফা সহিংসতার দিকে ঠেলে দিয়েছে।

গত বছরের অক্টোবরে সাধারণ নির্বাচনে বিজয়ী হন আল-সদর। কিন্তু ইরান-সমর্থিত গোষ্ঠীগুলোকে বাইরে রেখে সরকার গঠনের চেষ্টা করেন তিনি। কিন্তু সরকার গঠনে ব্যর্থ হয়ে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড ঠেকাতে পার্লামেন্ট থেকে পদত্যাগ করেন তার দলের আইনপ্রণেতারা। গেল মাসের শেষের দিকে সরকারি ভবন দখলে নেয় তার সমর্থকরা।

ফলে উত্তেজনা বাড়তে থাকে। জটিল আকার ধারণ করে পরিস্থিতি। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সোমবার রাজনীতি থেকে চূড়ান্ত অবসরের ঘোষণা দেন আল-সদর। দুর্নীতিগ্রস্ত সরকারি ব্যবস্থা সংস্কারে অন্যান্য শিয়া নেতা ও দলগুলোর ব্যর্থতার কারণে তিনি এ ঘোষণা দেন বলে মনে করা হচ্ছে।

আল-সদরের এ ঘোষণার পরই ঝড়ের গতিতে রাজপথে নেমে আসে তার সমর্থকেরা। তারা আবারও গ্রিনজোনে সরকারি ভবনগুলোতে ঢোকার চেষ্টা করেন। বিক্ষোভকারীরা শহরের গ্রিনজোন এলাকায় প্রবেশ বিভিন্ন সরকারি দফতর ও ভবনগুলোর নিয়ন্ত্রণ নেয়ার চেষ্টা করলে বাধা দেয় গ্রিনজোনের নিরাপত্তা বাহিনী।

এক পর্যায়ে দু’পক্ষের মধ্যে তুমুল সংঘর্ষ বাঁধলে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় গোটা এলাকা। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে আল-সদরের সমর্থকরা অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা করলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে টিয়ার শেল ও গুলি ছোঁড়ে পুলিশ। এতে ঘটনাস্থলেই হতাহত হন বেশ কয়েকজন।

আল-জাজিরার খবরে বলা হয়েছে, সহিংস এ বিক্ষোভে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে আল-সদর নিয়ন্ত্রিত পিস ব্রিগেডসের যোদ্ধারাও। নিরাপত্তা কর্মকর্তারা বলছেন, পিস ব্রিগেডসের যোদ্ধা ও গ্রিনজোনের সুরক্ষায় নিয়োজিত ইরাকি নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষ হয়। তবে ইরান-সমর্থিত মিলিশিয়ারাও এতে জড়িত থাকতে পারে।

কয়েক সপ্তাহ ধরেই পার্লামেন্ট ভবন দখল করে রেখেছেন সদরের সমর্থকরা। পরে তারা প্রেসিডেন্ট ভবনও নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেষ্টা করেন। এটি একসময় ইরাকের সাবেক প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনের প্রাসাদ ছিল। বিক্ষোভকারীদের এখানকার সুইমিং পুলে ঝাঁপ দিতে ও উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতেও দেখা যায়।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অনির্দিষ্টকালের জন্য কারফিউ জারি করেছে ইরাকি সামরিক বাহিনী। বিক্ষোভকারীদের গ্রিনজোন ছেড়ে যাওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।

এদিকে ইরাকের এ সহিংসতার ঘটনায় নাগরিকদের ইরাক ছাড়তে বলেছে কুয়েত। একই সঙ্গে যাদের ইরাক সফরের পরিকল্পনা রয়েছে, তা স্থগিত করতে বলা হয়েছে। ইরাকের সঙ্গে সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছে ইরান। উড়োজাহাজের সব ফ্লাইট বাতিল করেছে দেশটির কর্তৃপক্ষ।

বৈশাখী নিউজ/ ইডি

Share Now

এই বিভাগের আরও খবর