প্রস্তুত শহীদ মিনার, সর্বস্তরের মানুষ জানাবে শ্রদ্ধা

আপডেট: February 20, 2023 |

সন্ধ্যার পর রাতের প্রথম পর্বের পাঠ চুকলেই একুশের প্রথম প্রহর। জাতির সূর্য সন্তানদের দিন, একুশে ফেব্রুয়ারি। সোমবার দিবাগত রাতের প্রথম প্রহরে জাতি বিনম্র শ্রদ্ধায় স্মরণ করবে ভাষার জন্য জীবন উৎসর্গকারীদের।

যথাযোগ্য মর্যাদা ও ভাবগম্ভীর পরিবেশে ‘মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ উদযাপনের জন্য ইতোমধ্যে সার্বিক প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। সেজে উঠেছে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার।

একুশের প্রথম প্রহরে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানাতে আসবেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

ধাপে ধাপে সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত হবে স্মৃতির মিনার। জাতি স্মরণ করবে বায়ান্নর বীর শহীদদের।

সরেজমিনে সোমবার বিকালে দেখা যায়, শহীদ মিনার ঘিরে ব্যপক নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা হয়েছে। স্তরে স্তরে বিভিন্ন বাহিনীর নজরদারি চলছে। শেষ মুহূর্তের পরিচ্ছন্নতার কাজ চলছে। শহীদ মিনার সংলগ্ন রাস্তা আলপনার রাঙানো হয়েছে৷ আশেপাশের রাস্তার দেয়ালে নতুন রঙ করা হয়েছে। গাছের গুঁড়ি রং করা হয়েছে।

 

 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের ছাত্রছাত্রীরা রোববার শহীদ মিনার ও এর পাশের রাস্তায় আলপনা আঁকেন। এ ছাড়া পরিচ্ছন্নকর্মীরা এই এলাকা পরিষ্কার করেন।

ইতোমধ্যে দর্শনার্থীদের আনাগোনাও দেখা গেছে। করোনা মহামারিতে জনসমাগম এড়াতে গত দুই বছর সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে সর্বোচ্চ পাঁচজন এবং ব্যক্তি পর্যায়ে সর্বোচ্চ দুইজন একসঙ্গে শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণের নির্দেশনা থাকলেও এবার সে বিধিনিষেধ থাকছে না।

জনসাধারণের শহীদ মিনারে যাওয়ার পথ এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান জানান, সর্বস্তরের জনসাধারণ পলাশী মোড় হয়ে সলিমুল্লাহ মুসলিম হল ও জগন্নাথ হলের সামনে দিয়ে শহীদ মিনারে যেতে হবে। শহীদ মিনারে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণের পর সেখান থেকে বিশ্ববিদ্যালয় খেলার মাঠের সামনের রাস্তা দিয়ে দোয়েল চত্ত্বর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের রাস্তা দিয়ে চাঁনখার পুল হয়ে শুধুমাত্র প্রস্থান করতে হবে। শহীদ মিনারের দিকে আসা যাবে না।

এছাড়া, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ও আজিমপুর কবরস্থানে যাতায়াতের জন্য একটি রুট-ম্যাপও প্রণীত হয়েছে বলে জানান উপাচার্য। শহীদ মিনার এলাকায় কোনো মিছিল বা সমাবেশ করা যাবে না, কোনো ব্যানার, পোস্টার বা ছবি টাঙানো যাবে না।

শহীদ মিনারের প্রবেশপথে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীসহ বিএনসিসি, রেড ক্রিসেন্ট, রোভার স্কাউটস, রেঞ্জার ও স্বেচ্ছাসেবকরা বিভিন্ন দায়িত্বে নিয়োজিত থাকবেন।

 

 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও একুশে উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক ড. একেএম গোলাম রব্বানী বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে আমাদের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের অতিথিরা আসবেন। চূড়ান্ত পর্যায়ের প্রস্তুতি, কোথাও কিছু করার প্রয়োজন আছে কিনা সেগুলো এখন দেখা হচ্ছে এবং সবকিছু পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।’

কয়েক স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা

এদিকে শহীদ মিনারের চারপাশে আলোকসজ্জার পাশাপাশি  পুরো এলাকা সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হয়েছে। পাশেই ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ছাদে তৈরি করা হয়েছে ঘোষণা মঞ্চ। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদ প্রাঙ্গণে পুলিশ, র‌্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কন্ট্রোল রুম, ফায়ার সার্ভিস ও প্রাথমিক চিকিৎসা ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে। উপাচার্য বলেন, ‘প্রতি বছরের মতো এবারও সুষ্ঠুভাবে যথাযোগ্য মর্যাদায় শহীদদের অমর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের সুযোগ সব মানুষই পাবেন।’

নিরাপত্তার বিষয়ে উপাচার্য বলেন, ‘পুরো এলাকা সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হয়েছে। নিরাপত্তার বিষয়ে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী গভীরভাবে তদারকি করছেন। একুশের প্রথম প্রহরে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর পুষ্পার্ঘ্য অর্পণের মাধ্যমেই অমর একুশের কর্মসূচি শুরু হয়। সেজন্য সব আয়োজন ও সব ধরনের নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হচ্ছে।’

রাষ্ট্রীয় আচার অনুযায়ী, ২১ ফেব্রুয়ারি প্রথম প্রহর ১২টা ১ মিনিটে প্রথমে রাষ্ট্রপতি এবং পরে প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, শিক্ষক, ঢাকায় বিভিন্ন দূতাবাসের কর্মকর্তা, রাজনৈতিক নেতা, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন এবং সর্বস্তরের জনগণ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এসে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করবেন।

২০ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা ৬টা থেকে ২১ ফেব্রুয়ারি দুপুর ২টা পর্যন্ত জনসাধারণের চলাচল ও সব ধরনের যানবাহন নিয়ন্ত্রণের জন্য ট্রাফিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলা হয়েছে। ২০ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় পাস বা আইডি কার্ড ছাড়া প্রবেশ নিষিদ্ধ থাকবে।

শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানাতে প্রবেশের ক্ষেত্রে সবাইকে পলাশী ক্রসিং, এসএম হল ও জগন্নাথ হলের সামনের রাস্তা দিয়ে যেতে হবে। কোনোভাবেই অন্য কোনও রাস্তা ব্যবহার করে শহীদ মিনারে প্রবেশ করা যাবে না।

শহীদ মিনার থেকে বের হওয়ার ক্ষেত্রে দোয়েল চত্বরের দিকের রাস্তা অথবা ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের সামনের রাস্তা দিয়ে বের হতে হবে। কোনোভাবেই প্রবেশের রাস্তা দিয়ে বের হওয়া যাবে না বলে জানিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ।

সোমবার বিকালে র‌্যাবের মহাপরিচালক এম খুরশীদ হোসেন নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে সন্তুষ্ট প্রকাশ করে বলেন, ‘জঙ্গি হামলার  কোনও হুমকি নেই। তবে যেকোনও পরিস্থিতি মোকাবিলায়  কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারসহ সারা দেশে নিরাপত্তা ও নজরদারি জোরদার করা হয়েছে। পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সর্বোচ্চ নজরদারি থাকবে।’

তিনি আরও বলেন,‘শহীদ মিনারের নিরাপত্তার বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে র‍্যাবের বোম ডিস্পোজাল ইউনিট ও ডগ সুইপিং দল রাখা হয়েছে। পাশাপাশি যেকোনও  পরিস্থিতি মোকাবিলায় র‍্যাবের স্পেশাল ফোর্স ও হেলিকপ্টার সার্বক্ষণিক প্রস্তুত রয়েছে। শহীদ মিনারমুখী রাস্তার মোড়গুলোতে চেক পোস্ট স্থাপনের মাধ্যমে সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের তল্লাশি ও যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

শহীদ মিনারে আগত  নারীরা যাতে ইভটিজিংয়ের শিকার না হন সেজন্য প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে বলে জানান তিনি।

Share Now

এই বিভাগের আরও খবর