করোনার ভ্যাকসিন পরীক্ষার দ্বিতীয় ধাপে চীন, খুঁজছে স্বেচ্ছাসেবক

আপডেট: April 11, 2020 |

করোনাভাইরাসের ভয়াল থাবায় পুরো বিশ্বই আজ স্তব্ধ। দেশে দেশে চলছে লকডাউন, ঘরে বন্দি মানুষ। তবুও প্রতিদিনই বাড়ছে মৃত্যুর মিছিল। আক্রান্ত বাড়ছে প্রতি মিনিটে। এরই মধ্যে বিশ্বজুড়ে মারণ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে প্রায় সাড়ে ১৬ লাখেরও বেশি মানুষ। মৃত্যুর সংখ্যা প্রায় লাখ ছুঁই ছুঁই। কার্যকর কোন ওষুধ নেই, নেই কোন প্রতিষেধক। এ যেন নিশ্চিত মৃত্যুর অপেক্ষায় বেঁচে থাকা। তবে বিশ্বজুড়ে বিজ্ঞানীরা তাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। প্রতিষেধক আবিষ্কারে দিনরাত কাজ করে চলেছেন। আশার কথা চীন, যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল, অস্ট্রেলিয়াসহ বিশ্বের কয়েকটি দেশের বিজ্ঞানীরা সফলতার দ্বারপ্রান্তে।

করোনার প্রতিষেধক আবিষ্কারে সবার চেয়ে এগিয়ে রয়েছেন চীনা বিজ্ঞানীরা। এরই মধ্যে তারা করোনা ভ্যাকসিনের প্রথম পর্যায়ের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল সফলভাবে সমাপ্ত করেছেন। এবার দ্বিতীয় পর্যায়ের পরীক্ষা চালানোর জন্য স্বেচ্ছাসেবক খুঁজছেন দেশটির বিজ্ঞানীরা। প্রথম ট্রায়ালের মাত্র এক সপ্তাহ পরেই দ্বিতীয় পর্যায়ের স্বেচ্ছাসেবীদের খোঁজ শুরু হয়েছে বলে সরকারী এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।

ট্রায়াল প্রোগ্রামটি জন্য করোনভাইরাস প্রাদুর্ভাবের আঁতুড়ঘর হুবেই প্রদেশে বসবাসকারী ১৮ বছর বা তার বেশি বয়সের ৫০০ জনকে নিয়োগ দেওয়া হবে। চীনের রাষ্ট্র পরিচালিত পত্রিকা পিপলস ডেইলির ওয়েবসাইটে এই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে।

ভ্যাকসিনগুলি বিকাশের জন্য গবেষকদের তিন বা চার পর্যায়ে ক্লিনিক্যাল পরীক্ষার প্রয়োজন হয়। যাতে প্রতিটি ধাপে ক্রমবর্ধমান সংখ্যক লোককে ভ্যাকসিন দেওয়া হয় এবং তারপরে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া ও কার্যকারিতা নির্ধারণ করা হয়। ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালগুলি কয়েক বছর সময় নিতে পারে। তবে বর্তমান মহামারি পরিস্থিত বিবেচনায় আরও দ্রুততম সময়ে এটা শেষ করা সম্ভব হবে বলে আশা করছেন বিজ্ঞানীরা।

বেভারটনের ওরেগন ন্যাশনাল প্রাইমেট রিসার্চ সেন্টারের ভ্যাকসিন স্টাডিজ বিশেষজ্ঞ ইমিউনোলজিস্ট মার্ক স্লিফকা বলেছেন,’চীন খুব দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে, তাদের কার্যক্রম খুবই সুসংহত। দ্রুতই তারা সফলতা দেখাতে পারবে।’

চীন ১ মার্চ প্রথম পর্যায়ের ক্লিনিকাল ট্রায়াল শুরু করেছিল। একই দিনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক বায়োটেকনোলজি সংস্থা মোদারনা থেরাপিউটিক্স সিয়াটলের এক বাসিন্দার উপরে করোনারে ভ্যাকসিন পরীক্ষামূলকভাবে প্রয়োগ করেছিল।

বেইজিংয়ের প্রথম পর্যায়ের ক্লিনিকাল ট্রায়াল শেষ হয় ২ এপ্রিল। ১১৮ জন স্বেচ্ছাসেবীর উপর প্রথম পর্যায়ের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালটি চালানো হয়েছিল। চীনের সেনাবাহিনীর ভাইরোলজিস্ট চেন ওয়ের নেতৃত্বে একটি গবেষণা দল এটি পরিচালনা করেছিল। চেনের দল প্রথম পর্যায়ে ভ্যাকসিনগুলি মানবদেহের জন্য নিরাপদ কি-না এবং প্রতিরোধ প্রক্রিয়াগুলি কিভাবে কাজ করে সেটা দেখেছেন। এবার দ্বিতীয় পর্যায়ের পালা।

চীন সম্প্রতি জানিয়েছে যে, প্রথম পর্বের পরীক্ষার জন্য স্বেচ্ছাসেবকদের কিছু তাদের ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিন এবং পর্যবেক্ষণের সময়সীমা শেষ করেছে। তাদের সিটি পরীক্ষা এবং রক্ত ​​পরীক্ষা স্বাভাবিক ছিল। তবে কর্তৃপক্ষ তাদের চিকিৎসার বিষয়ে এখনও পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রকাশ করেনি।

যদি প্রথম এবং দ্বিতীয় পর্যায়টিকে সফল হিসাবে বিবেচনা করা হয়, তবে গবেষকরা তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা চালু করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। যার মধ্যে হাজার হাজার লোককে ভ্যাকসিনটি প্রয়োগ করা হবে। এটা সফল হলে ভ্যাকসিনটি আপাতত মানবদেহে ব্যবহারের জন্য অনুমতি দেওয়া হতে পারে।

সূত্র- ভয়েস অব আমেরিকা।

বৈশাখী নিউজএপি

Share Now

এই বিভাগের আরও খবর