সারা দেশে বন্যার অবনতি, খাদ্য সংকটে কয়েক লাখ মানুষ

আপডেট: July 16, 2020 |

পাহাড়ি ঢল আর ভারি বৃষ্টিপাতে সারা দেশে বন্যা পরস্থিতির আরও চরম অবনতি হয়েছে। দ্বিতীয় দফা চলা এ বন্যায় কয়েক লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। পাশাপাশি খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে ভয়াবহ রূপে। বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলের অবস্থা অত্যন্ত নাজুক।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, উত্তরাঞ্চলে তিস্তা-ধরলা-করতোয়া-মহানন্দায় পানি কমছে। বাড়ছে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি। এছাড়া বিভিন্ন স্থানে নদ-নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ঢলের তোড়ে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ও সড়ক ভেঙ্গে গেছে। খাদ্য ও সুপেয় পানির সংকটের সঙ্গে দেখা দিয়েছে পয়ঃনিষ্কাশন সমস্যা।

কুড়িগ্রামে ধরলা নদীর পানি সামান্য কমলেও বাড়ছে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি। বন্যার তোড়ে রৌমারী শহর রক্ষা বাঁধের ২০ মিটার অংশ ধসে গেছে। সেই সাথে নতুন করে ১২টি গ্রামসহ রৌমারী উপজেলা পরিষদ ও রৌমারী বাজার প্লাবিত হয়েছে। এরিই মধ্যে জেলায় ৪শ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ এসেছে ত্রাণ সহায়তা হিসেবে।

নদ-নদীতে ব্যাপকহারে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় গাইবান্ধাও। জেলার চরাঞ্চলসহ চার উপজেলার ২৬টি ইউনিয়নের ১৮০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ডুবে গেছে অন্তত দেড় লক্ষাধিক ঘরবাড়ি। দুর্গত এলাকায় দেখা দিয়েছে পানি ও খাদ্যাভাব ।

এদিকে, উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সুনামগঞ্জে সুরমা নদীর তীর উপচে উজানের ঢলের পানি এখনও প্রবেশ করছে লোকালয়ে। ১১টি উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম এখন বানের পানিতে নিমজ্জিত। এ নিয়ে দ্বিতীয় বারের মতো কৃষকের আমন ধানের বীজতলা বন্যায় বিনষ্ট হয়েছে।

সিলেটের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অপরিবর্তিত রয়েছে। কানাইঘাটে সুরমা ও ফেঞ্চুগঞ্জে কুশিয়ারা নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বালাগঞ্জ, ওসমানীনগর, গোলাপগঞ্জ ও ফেঞ্চুগঞ্জে পানি বেড়েছে। তবে, জৈন্তাপুরসহ উজানের কয়েকটি এলাকার পানি কমেছে।

অন্যাদিকে, পাহাড়ি ঢল আর টানা ভারি বর্ষণে জামালপুরের বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। ৭ উপজেলায় ৩৯টি ইউনিয়নের প্রায় সাড়ে ৩ লাখ মানুষ পানিবন্দী। বন্যায় ৮১ হাজার ২১৩টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যায় পানিতে ডুবে এখন পর্যন্ত ২ জনের মৃত্য হয়েছে। দুর্গত এলাকায় চিকিৎসা সেবা দিতে ৩৯টি মেডিক্যাল টিম কাজ করেছে।

দ্বিতীয় দফা বন্যায় সিরাজগঞ্জে যমুনার পানি অব্যাহতভাবে বাড়তে থাকায় জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। চরের ঘরবাড়িতে ১ থেকে ২ ফুট পানি থাকায় কর্মহীন হয়ে পড়েছের মানুষ। দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ খাবার পানি ও খাদ্যের অভাব।

এদিকে ঢাকার অদূরে মানিকগঞ্জের আরিচা পয়েন্টে যমুনা নদীর পানি গত ২৪ ঘন্টায় ৪৩ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ২৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।

আত্রাই নদীর পানির তোড়ে নাটোরের সিংড়ায় সড়ক ভেঙ্গে গেছে। পানি ঢুকে পড়ছে লোকালয় ও ফসলি জমিতে। দুই মাস আগে সড়কটি নির্মাণ করে এলজিইডি।

রাজবাড়ীতে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌ-রুটে পানি বৃদ্ধি ও তীব্র স্রোতের কারণে ফেরি চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। ঘাটগুলোতে ফেরি ভিড়তে আগের চেয়ে দ্বিগুণের বেশি সময় লাগছে।

আর ফেনীর ফুলগাজী ও পরশুরামে মুহুরী ও কহুয়া নদীর নয়টি স্থানে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙ্গে অন্তত ৫ শতাধিক পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। দুর্গত এলাকা পরিদর্শন করেন পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কবির বিন আনোয়ার।

বৈশাখী নিউজজেপা

Share Now

এই বিভাগের আরও খবর