সামনে আসছে একের পর এক অভিযোগ, চাপে পুলিশবাহিনী

অনিয়ম, হেফাজতে নিয়ে নির্যাতনসহ নানা অভিযোগে গত ২৪ ঘণ্টায় পুলিশের তিনজন ওসি বা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।

এর মধ্যে নেত্রকোনার দূর্গাপুর থানার ওসি মিজানুর রহমান, কক্সবাজার সদর মডেল থানার ওসি আবু মো. শাহজাহান কবির এবং বরগুনার বামনা থানার ওসি ইলিয়াস আলী তালুকদারকে আলাদা অভিযোগে প্রত্যাহার করা হয়।

গত শনিবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া এক ভিডিওতে দেখা যায়, নিহত মেজর সিনহার সহযোগী শিপ্রা দেবনাথ এবং সিফাতকে মুক্তি দেয়ার দাবিতে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভে বামনা থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক নজরুল ইসলামকে চড় মারেন একই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. ইলিয়াস আলী তালুকদার।

জানা যায় যে, ওই বিক্ষোভে লাঠিচার্জের নির্দেশ দেয়া হলেও সেটি না করার কারণে সহকর্মীকে চপেটাঘাত করেন ওসি মো. ইলিয়াস আলী তালুকদার।

পরে এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। ওই তদন্ত কমিটির প্রধান এবং বরগুনার অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মফিজুল ইসলাম বলেন, প্রকাশ্যে আরেক পুলিশ কর্মকর্তাকে চপেটাঘাত করার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

‘তার বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। তাকে প্রত্যাহার করা এবং তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্তের সুপারিশ করি। সেই সুপারিশের প্রেক্ষিতে তাকে প্রত্যাহার করা হয়েছে,’ বলেন মফিজুল ইসলাম।

সম্প্রতি পুলিশের গুলিতে সাবেক এক সেনাসদস্য নিহত হওয়ার পর এ বিষয়ে করা হত্যা মামলায় আসামি করা হয়েছে টেকনাফের ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, বাহারছড়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ লিয়াকতসহ বেশ কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তাকে।

এ ঘটনার বেশ কয়েক দিন পরেই মঙ্গলবার এমন প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত হলো। তবে মানবাধিকার কর্মীরা এই পরিস্থিতিকে কিছুটা ভিন্নভাবে দেখছেন।

মেজর সিনহার হত্যার ঘটনায় যে আলোড়ন তৈরি হয়েছে তার কারণে পুলিশ বাহিনী কিছুটা চাপের মুখে পড়েছে বলে মনে করেন অধিকার কর্মীরা।

তারা বলছেন, দেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে যখন বড় কোন ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠে, নানা ধরণের সমালোচনা তৈরি হয়, তখন সেই পরিস্থিতি থেকে বের হতে নানা পদক্ষেপ নেয়া হয়।

মানবাধিকারকর্মী ও আইনজীবী এলিনা খান বলেন, পুলিশ বাহিনীর সুনামের দিক থেকে দেখতে গেলে বর্তমান পরিস্থিতি কিছুটা হলেও চাপ সৃষ্টি করেছে। তবে এটিকে তিনি কৌশল হিসেবে দেখতে চান।

‘এক ধরণের চাপ তো অবশ্যই। কারণ জনগণের বিস্ফোরণ, জনগণের বক্তব্য তাদের সুনামের জন্য তো অবশ্যই চাপ সৃষ্টি করেছে।’

তিনি বলেন, তবে এ ধরণের ঘটনা অনেক ঘটেছে এবং তারা কৌশলে বের হয়ে গেছে। একজন সাধারণ মানুষ যদি অপরাধের জন্য শাস্তির আওতায় আসে, তাহলে পুলিশ কেন আসবে না? তাই এটাকে আমি কৌশল বলতে চাই।

এ সম্পর্কে জানতে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করা হলেও এই প্রতিবেদন তৈরি করা পর্যন্ত কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।

তবে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক নুরুল হুদা বর্তমান পরিস্থিতিকে চাপ বলে মনে করেন না। তিনি বলেন, দেশে ছয় শতাধিক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রয়েছেন।

এর মধ্যে হাতে গোনা কয়েক জনের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ উঠলে ব্যবস্থা নিতেই হয়। এটাই নিয়ম। এটির সাথে অন্য কিছুর যোগসূত্র নেই বলে মনে করেন পুলিশের সাবেক এই মহাপরিদর্শক।

‘আমি মনে করি না এটা কোনও ধরণের চাপ।’

মেজর সিনহার হত্যার ঘটনার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, একটা বড় ঘটনা ঘটেছে। তার প্রেক্ষিতে এটা হয়েছে বলে মনে হতে পারে কিন্তু আসলে তা নয় এবং এটি হওয়াও উচিত নয়।

তার মতে, পুলিশের হাতে ক্ষমতা থাকে এবং এর অপব্যবহার হলে তদন্ত ও ব্যবস্থা নেয়া হবে সেটাই স্বাভাবিক। আর সে প্রেক্ষিতেই এসব ঘটনা ঘটেছে।

মানবাধিকার আইনজীবীরা অবশ্য বলছেন, পুলিশের বিরুদ্ধে নানা সময় আসা অভিযোগের বিষয়ে আরো অনেক আগে থেকেই যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়া উচিত ছিল।

কারণ এরআগে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের মতো অভিযোগের ক্ষেত্রেও সেরকম কোনও তদন্তের খবর আসেনি।

মানবাধিকার আইনজীবী সারা হোসেন বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা-বাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্ত হলে সেটা আসলে কাঙ্ক্ষিতই ছিল।

‘মেজর সিনহার ঘটনার কারণে মনে হচ্ছে খুব অল্প হলেও রাষ্ট্রের একাংশ একটা মোড় নেয়ার চেষ্টা করছে এবং এ ব্যাপারগুলো নিয়ে তদন্ত করার চেষ্টা করবে। এটা খুব দরকার ছিল।’

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে আসা অভিযোগের তদন্ত হওয়া এবং যারা অভিযোগ করেন তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা গেলে, এই বাহিনীর উপর জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনা সম্ভব বলে মনে করেন মানবাধিকার আইনজীবীরা। খবর: বিবিসি বাংলা।

বৈশাখী নিউজ/ বিসি