চিরকুটে দুই থানার ওসিকে দায়ী করে পরিছন্নতা কর্মীর আত্মহত্যা

আপডেট: June 6, 2023 |
print news

ইন্দুরকানী ও পিরোজপুর প্রতিনিধি : চিরকুটে দুই থানার ওসিকে দায়ি করে বিষপান করে আত্মহত্যা করেছে আল মামুন (৪০) নামে এক পরিচ্ছন্ন কর্মি।

এ ঘটনাটি ঘটেছে পিরোজপুরের ইন্দুরকানী উপজেলায়।

বিষপান করে আত্মহত্যার পথ বেছে নেওয়া মামুন বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জ উপজেলার ছোট কুমারখালী গ্রামের শেখ আবুল কালামের ছেলে।

সে ছোট বেলা থেকেই তার মামা ইন্দুরকানী উপজেলার গাবগাছিয়া গ্রামের সাবেক উপজেলা ভাইস-চেয়ারম্যান আ: খালেক গাজীর বাড়িতে থাকত। মামুন পিরোজপুর সদর থানায় পরিচ্ছন্ন কর্মি হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

বিষপানে মৃত্যুর পর স্বজনরা তার নিজ হাতে লেখা একটি চিরকুট লেখা পান। তাতে লেখা ছিল ‘‘আমি নিরদোশ (নির্দোষ)।

আমার মৃত্যুর জন্য দায়ী ইন্দুরকানী থানার ওসি এনামুল হক আর পিরোজপুর সদর থানার ওসি আবির মোঃ হোসেন।

IMG 20230606 233315 750 x 430 pixel

আমি ইন্দুরকানী থানার ওসির টাকা চুরি করি নাই। আমাকে ফাঁসানো হয়েছে। চিরকূটের শেষ অংশে মৃতদেহটির পোস্টমর্টেম না করে মামা বাড়িতে দাফনের দাবি জানিয়েছে মামুন।

তবে চিরকুট ছাড়াও স্বজনদের কাছে মোবাইলে এ ঘটনার জন্য দুই থানার দুই ওসিকে দায়ী করে জবানন্দি দিয়ে গেছেন। মৃত্যুর আগে জবানবন্দি দেয়া এর একটি অডিও ক্লিপও তাদের কাছে বর্তমানে সংরক্ষিত রয়েছে।

তবে মঙ্গলবার সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃতদেহটির ময়না তদন্ত হয়েছে । এরপর আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যার দিকে মামুনের মরদেহ ইন্দুরকানীর গাবগাছিয়া গ্রামে নিয়ে আসার কথা জানান তার স্বজনরা।

মৃত্যুর আগে সোমবার সকালে ইন্দুরকানী ভাড়া বাসায় বিষপানের পর রাতে ঢাকা নেওয়ার পথে মারা যান মামুন।

স্বজনরা জানান,জন্মের পর থেকে ইন্দুরকানী উপজেলার গাবগাছিয়া গ্রামে মামা বাড়িতে মামা সাবেক ভাইস-চেয়ারম্যান আঃ খালেক গাজীর কাছেই বড় হন মামুন।

মামুন প্রায় ১০ বছর ইন্দুরকানী থানায় পরিচ্ছন্ন কর্মির চাকুরী করার পর দুই মাস আগে ইন্দুরকানী থেকে পিরোজপুর সদর থানায় বদলী করা হয় তাকে।

এরপর সে নিয়মিত ইন্দুরকানী থেকে যাতায়াত করে পিরোজপুরে গিয়ে দায়িত্ব পালন করত।

মামুন ও মরিয়ম দম্পতির আফসানা আক্তার মীম নামের ১৬ বছর বয়সী একটি মেয়ে এবং আব্দুল্লাহ আল কাওসার নামে ৮ বছর বয়সী একটি ছেলে রয়েছে।

এ বিষয়ে মামুনের স্ত্রী মরিয়ম বেগম জানান, তার স্বামী মামুন রোববার (৪ জুন) বিকেলে বাড়িতে ফেরার পর তাকে খুবই বিমর্ষ দেখাচ্ছিল।

এরপর মামুনকে অনেক বার জিজ্ঞাসা করার পর সে জানায় যে, পিরোজপুর সদর থানার মসজিদ থেকে একটি জায়নামাজ চুরির অভিযোগে ওই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবির মোহাম্মদ হোসেন তাকে গালমন্দ করার পাশাপাশি মানুষের সামনে তাকে শারিরীকভাবে লাঞ্চিত করেছে।

এ ঘটনায় মানষিকভাবে ভেঙে পড়া মামুন কোন অঘটন ঘটাতে পারে এই আশংকায় পরিবারের সদস্যরা পুরো বিকেল এবং রাতেও তাকে পাহাড়া দিয়েছি।

তবে সকালে বাজারে গিয়ে আগাছা নিধনের ঔষুধ কিনে তা পান করে মামুন। এরপর স্ত্রীকে বিষয়টি জানালে, তারা দ্রুত মামুনকে ইন্দুরকানী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়।

সেখান থেকে তাকে পিরোজপুর জেলা হাসপাতালে এবং পরবর্তীতে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করে।

সেখানে মামুনের শারিরীক অবস্থার অবনতি হওয়ায় বিকেলে দ্রুত তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে রওনা হয় স্বজনরা।

এরপর পথিমধ্যেই সন্ধ্যা ৭টার দিকে মামুনের মৃত্যু হয়। মামুনের স্ত্রী মরিয়মের অভিযোগ ইন্দুরকানী থানায় থাকাকালীন ওই থানার ওসি এনামুল হক তার স্বামীর উপর বিভন্ন সময়ে শারিরিক ও মানসিক নির্যাতন করত।

ওসির আচারনে সে সবসময় মানসিক ভাবে হতাশা গ্রস্থ ছিল। এমনকি ওসি টাকা চুরির মিথ্যে অপবাদ দেয় তাকে। এপরপর বিভিন্ন ভাবে চাপে পড়ে মামুন ওসিকে ২৩ হাজার টাকা দিতে বাধ্য হয়।

মরিয়মের অভিযোগ পিরোজপুর সদর থানায় যোগদানের পর ইন্দুরকানী থানার ওসি এনামুল সেখানকার ওসির কাছে তার স্বামীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরণের অপপ্রচার চালিয়েছে যাতে সেখানে সে ঠিকমত কাজ করতে না পারে।

অভিযোগের বিষয়ে ইন্দুরকানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ এনামুল হক বলেন, মামুন চলতি বছরের মার্চ মাসে এখান থেকে চলে গেছে তার সাথে আমার কোন যোগাযোগ নাই। এছাড়া এখানে কোন টাকা চুরির ঘটনা ঘটে নাই।

একটি সম্পর্কের বিষয় নিয়ে মামুনের সাথে তার স্ত্রীর পারিবারিক কলহ ছিল। এ কারনে হয়ত এ ঘটনা ঘটতে পারে।

অন্যদিকে পিরোজপুর সদর থানার ওসি আবির মোহাম্মদ হোসেন জানান, থানায় চুরি কিংবা মামুনকে গালমন্দ ও মারধোরের কোন ঘটনাই ঘটেনি।

আর আমি এই থানায় যোগদান করেছি এক মাসও হয়নি। রোববার মামুনকে ঝাড়ু দিতে দেখেছি। তার সঙ্গে আর দেখা হয় নাই।

তার ইন্দুরকানীর বাসায় বসে কীটনাশক পান করে আত্মহত্যা করেছে বলে শুনেছি। আমি এর বিষয়ে ভালমন্দ তেমন কিছু জানিও না।

পুলিশ সুপার মো: সাইদুর রহমান জানান, মামুনের লেখা চিরকূটের বিষয়টি তিনি সাংবাদিকদের কাছ থেকে জেনেছেন।

মামুন এ বিষয়ে আগে কখনো তার কাছে কোন অভিযোগও করেননি। তবে চিরকূটের বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে বলেও জানান পুলিশ সুপার।

এ বিষয়ে কেউ দায়ী থাকলে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Share Now

এই বিভাগের আরও খবর