কেন্দুয়ায় যুবকককে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে বেদড়ক মারপিটের অভিযোগ


কেন্দুয়া (নেত্রকোনা) প্রতিনিধিঃ নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলায় নারী সংক্রান্ত একটি গ্রাম্য সালিশকে কেন্দ্র করে দুপক্ষের বিরোধের জেরে এক যুবককে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে পিটিয়ে মারাত্মক আহত করার অভিযোগ ওঠেছে প্রতিপক্ষের লোকজনের বিরুদ্ধে।
সম্প্রতি উপজেলার রোয়াইল বাড়ি আমতলা ইউনিয়নের কলসহাটি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
আহত যুবক দিদারুল হক বজলু (৩৫)।বর্তমানে তিনি ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তিনি কলসহাটি গ্রামের ইছব আলীর ছেলে এবং স্থানীয় যুবলীগ কর্মী।
বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) দুপুরে কলসহাটি গ্রামে গেলে কথা হয় উভয়পক্ষের লোকজনসহ স্থানীয় বাসিন্দাদের সাথে।
জানা যায়, গত ৩ সেপ্টেম্বর সকালে কলসহাটি গ্রামে নারী সংক্রান্ত একটি সালিশ অনুষ্ঠিত হয়।
পরদিন ৪ সেপ্টেম্বর দুপুরে স্থানীয় বঙ্গবাজারে ওই সালিশকে কেন্দ্র করে কলসহাটি গ্রামের বাসিন্দা ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম মধুর সাথে একই গ্রামের যুবলীগ কর্মী দিদারুল হক বজলুর কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে দুজনের মধ্যে ধস্তাধস্তি হয়।
এ সময় দিদারুল হক বজলুকে রফিকুল ইসলাম মধু নিচে ফেলে দিলে বজলু তার হাতে থাকা মোটরসাইকেলের চাবি দিয়ে মধুর পেটে ও মুখে আঘাত করলে মধু রক্তাক্ত আহত হন।
পরে তাকে কেন্দুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয় এবং এ ঘটনায় থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়।
অপরদিকপ মধুকে আহত করার প্রতিবাদে স্থানীয় বঙ্গবাজারে প্রতিবাদ সভা করে বিএনপির নেতাকর্মীরা এবং তারা বজলুর ওপর বেশ কয়েকবার হামলার চেষ্টা চালায়।
একপর্যায়ে গত ৭ সেপ্টেম্বর দুপুরে তাকে তাদের বসতঘর থেকে মারপিট করতে করতে ধরে নিয়ে যান তারা। পরে রফিকুল ইসলাম মধুর চাচা গোমেজ আলীর বাড়িতে নিয়ে গিয়ে বজলুকে দড়ি দিয়ে বেধে বেদড়ক মারপিট করে মাটিতে ফেলে রাখা হয়। এ সময় বজলুর বৃদ্ধ পিতা ইছব আলীও আহত হন।
এদিকে ওইদিন পার্শ্ববর্তী কুতুবপুর গ্রামের ইউপি সদস্য হারেছ মিয়া স্থানীয় রোয়াইল বাজারে যাওয়ার পথে আহত বজলুকে পড়ে থাকতে দেখে দ্রুত ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। বিষয়টি নিয়ে কথা হলে ইউপি সদস্য হারেছ মিয়া এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
আহত দিদারুল হক বজলুর পিতা ইছব আলী বলেন, আমার ছেলেকে রফিকুল ইসলাম মধু ও তার চাচাতো ভাই রফিকুল ইসলাম রুবেলসহ ১০-১২ জন লোক এসে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে যায় এবং মারধর করে ফেলে রাখে। আমার একটা মাত্র ছেলে। কেউ তাকে ফেরাতেও যায়নি। তার ডান হাত ও পায়ের একাধিক স্থানের হাড় ভেঙে গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কলসহাটি গ্রামের কয়েকজন বাসিন্দা জানান, এমন অন্যায় ও অমানবিক ঘটনা এর আগে আমরা আমাদের কলসহাটি গ্রামে কখনও দেখিনি। নিজের ঘর থেকে ধরে নিয়ে গিয়ে বর্বরভাবে মারপিট করার বিষয়টিকে আমরা নিন্দা জানাই।
বিএনপি নেতা রফিকুল ইসলাম মধু বলেন, বজলু বাড়িতে থেকে আমাদের বিরুদ্ধে বাজে কথা বার্তা বলতেছিল। তাই আমাদের লোকজন উত্তেজিত হয়ে তাকে মারধর করেছে। তবে বজলুকে তিনি নিজে কোনো মারধর করেননি বলে জানান।
এ বিষয়ে ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শেখ মোস্তফা কামাল বাবলু বলেন, বজলু যুবলীগ কর্মী। সে মাদকের সাথেও জড়িত। আমাদের দলের লোকজনকে সে প্রথমে মারধর করে।
এ ঘটনায় আমরা প্রতিবাদ সমাবেশ করেছি এবং থানায় লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। তবে এখনও অভিযোগটি এফআইআর হয়নি। বিষয়টি সমাধানের জন্য আমরা অপেক্ষা করছি।
কিন্তু তারা কেউ আপস মীমাংসার জন্য যোগাযোগই করছে না। এছাড়া বজলুকে মারধর করার বিষয়টিও তিনি শুনেছেন বলে জানান।
বিষয়টি নিয়ে কথা হলে কেন্দুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান আকন্দ বলেন, আগের ঘটনায় থানায় একটা অভিযোগ দেওয়া হয়েছিল।
কিন্তু তারা বলল মীমাংসা করবে তাই এফআইআর হয়নি। দ্বিতীয় ঘটনাটি মৌখিকভাবে শুনেছি। তবে লিখিত অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।