পি কে হালদার ও তার ৩৭ সহযোগীর বিরুদ্ধে দশ মামলার অনুমোদন দুদকের

আপডেট: March 9, 2021 |

অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে পি কে হালদার ও তার ৩৭ সহযোগীর বিরুদ্ধে আরও দশটি মামলার অনুমোদন দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

একই সঙ্গে পিকে হালদারের সহযোগী অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন মোয়াজ্জেমসহ ৪৫ জনের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা চেয়ে ইমিগ্রেশনে চিঠি দিয়েছে দুদক। মঙ্গলবার দুপুর আড়াইটার দিকে দুদক প্রধান কার্যালয়ের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির সচিব ড. মু আনোয়ার হোসেন হাওলাদার এসব তথ্য জানান ।

তিনি বলেন, দশটি ভুয়া প্রতিষ্ঠানের নামে প্রায় ৮০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগে বিদেশে পালিয়ে থাকা পি কে হালাদারসহ ৩৭ সহযোগীর বিরুদ্ধে বিরুদ্ধে ১০টি পৃথক পৃথক মামলা অনুমোদন করা হয়েছে। একই সঙ্গে পি কে হালদারের ৩৩ সহযোগীর সম্পদ বিবরণীর নোটিশ জারি করার অনুমোদন দিয়েছে কমিশন। শিগগিরই এসব মামলা দায়ের করা হবে।

তিনি জানান, পি কে হালদার ছাড়া মামলায় ইন্টারন্যাশনাল লিজিং এ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেডের চেয়ারম্যান এম এ হাশেম, এমডি মোঃ রাশেদুল হক, ভারপ্রাপ্ত এমডি মোঃ আবেদ হোসেন এবং প্রতিষ্ঠানটির বোর্ড সদস্যসহ পি কে হালদারের অন্যান্য সহযোগীদের আসামি করা হচ্ছে।

আসামিদের তালিকায় রয়েছেন, দৃনান এ্যাপারেলসের চেয়ারম্যান কাজী মমরেজ মাহমুদ ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আবু রাজীব মারুফ, ইমেক্সোর প্রোপাইটর ইমাম হোসেন, লিপরো ইন্টারন্যাশনালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক উত্তম কুমার মিস্ত্রি, উইন্টেল ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের দুই পরিচালক সুকুমার সাহা ও তার মেয়ে অনিন্দিতা সাহা, আর্থস্কোপ লিমিটেডের চেয়ারম্যান প্রশান্ত দেউরী ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিরা দেউরী, ওকায়ামা লিমিটেডের চেয়ারম্যান সুব্রত দাস, আরবি এন্টার প্রাইজের মালিক রতন কুমার বিশ্বাস, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং এ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেসের পরিচালক পাপিয়া ব্যানার্জী ও তার স্বামী পরিচালক বাসুদেব ব্যানার্জী।

এছাড়া ইন্টারন্যাশনাল লিজিং এ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেসের পরিচালক এম নূরুল আলম, পরিচালক মোঃ নওশের-উল ইসলাম, পরিচালক নাসিম আনোয়ার, পরিচালক মোঃ নুরুজ্জামান, পরিচালক মোহাম্মদ আবুল হাসেম, পরিচালক জহিরুল আলমকে আসামি করা হচ্ছে।

এর আগে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অর্থ পাচারের মামলায় পি কে হালদারের তদন্তের অংশ হিসেবে তার ৭ হাজার ৮০ শতাংশ জমিসহ একটি ১০ তলা ভবন জব্দে আদালত থেকে আদেশ পায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদকের এক আবেদনে ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ কে এম ইমরুল কায়েশ এই আদেশ দেন।

দুদক সচিব আনোয়ার হোসেন বলেন, আসামিরা অসৎ উদ্দেশ্যে ক্ষমতার অপব্যবহার করে প্রতারণার মাধ্যমে যাচাই-বাছাই ছাড়াই কোনো মর্টগেজ না নিয়ে দশটি কাগুজে প্রতিষ্ঠানের মালিককে ঋণ পাইয়ে দিতে সহযোগিতা করেন।

বেনিফিসিয়ারীগণ ইন্টারন্যাশনাল লিজিং থেকে প্রায় ৮০০ কোটি টাকা ভুয়া ঋণের নামে উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেন এবং পরবর্তিতে বিভিন্ন

লেয়ারিংয়ের মাধ্যমে ভুয়া কোম্পানি ও বিভিন্ন ব্যক্তির হিসাবে উক্ত অর্থ স্থানান্তর ও রূপান্তরের মাধ্যমে অবস্থান গোপনপূর্বক পাচার করে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে অপরাধ করেছেন।

এর আগে ভুয়া ও কাগুজে পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের নামে ৩৫১ কোটি টাকার ঋণ অনুমোদন ও আত্মসাতের অভিযোগে গত ২৫ জানুয়ারি পি কে হালদারসহ ৩৩ জনের বিরুদ্ধে পাঁচটি মামলা করে দুদক। এসব মামলায় পি কে হালদার ছাড়া ইন্টারন্যাশনাল লিজিং এ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেসের সাবেক চেয়ারম্যান এম এ হাশেম, সাবেক এমডি মোঃ রাশেদুল হক, নয় জন বোর্ড সদস্য, পিপলস লিজিংয়ের চেয়ারম্যান উজ্জ্বল কুমার নন্দী, পি কে হালদারের অত্মীয় স্বজন ও সহযোগীসহ ৩৩ জনকে আসামি করা হয়।

এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রশান্ত কুমার হালদার ওরফে পি কে হালদারের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি নানা কৌশলে নামে-বেনামে অসংখ্য কোম্পানি খুলে শেয়ারবাজার থেকে বিপুল পরিমাণ শেয়ার কেনেন এবং ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে ও পরে নিজের আত্মীয়, বন্ধু ও সাবেক সহকর্মীসহ বিভিন্ন ব্যক্তিকে পর্ষদে বসিয়ে অন্তত চারটি ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণ নেন।

এই চার কোম্পানি হচ্ছে, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং এ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস (আইএলএফএসএল), পিপলস লিজিং এ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, এফএএস ফাইন্যান্স এ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড এবং বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি (বিআইএফসি)। এসব কোম্পানি থেকে তিনি ঋণের নামে বিপুল অংকের টাকা সরিয়ে বিদেশে পাচার করেছেন বলে তদন্তকারীদের ভাষ্য। এর মধ্যে আইএলএফএসএল গ্রাহকদের অভিযোগের মুখে গত বছরের শুরুতে পি কে হালদারের বিদেশ পালানোর পর দুদক তার ২৭৫ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের খবর দিয়ে মামলা করে।

দুদক কর্মকর্তারা বলছেন, পি কে হালদার তার নিজের, আত্মীয়দের, বন্ধু ও কর্মচারীদের নাম ব্যবহার করে আটটি কোম্পানিতে বিপুল অংকের টাকা বিনিয়োগ করেছেন, যার বৈধ কোনো উৎস অনুসন্ধানে মেলেনি। পি কে হালদারকে গ্রেফতারে ইতোমধ্যে ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড নোটিস জারি করা হয়েছে।

তার মা লীলাবতী হালদারসহ ২৫ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে হাই কোর্ট।

বৈশাখী নিউজএপি

Share Now

এই বিভাগের আরও খবর